গাজীপুরে ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ৮ মাসের এক শিশুকে অপহরণের প্রায় এক মাস পর ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহানগরীর বাসন থানাধীন নাওজোর এলাকা হতে ওই শিশুকে অপহরণ করা হয়। বৃহষ্পতিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামছুর রহমান প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার পাইকরতলী এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে মো. আবু সাইদ ওরফে সুমন (৪০) এবং তার স্ত্রী কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার অনন্তপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে মোসা. আইরিন (৩৪)।

উদ্ধারকৃত শিশু আব্দুল্লাহ আল নোমান গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার নাওজোর এলাকার ফরিদ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় পোশাক শ্রমিক মোক্তার হোসেনের ছেলে।

জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার আবু তোরাব মোহাম্মদ শামছুর রহমান জানান, গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন নাওজোর এলাকার ফরিদ মিয়ার বাড়ির পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন ভিক্টিমের বাবা-মা ও গ্রেপ্তারকৃত আইরিন দম্পতি। গত ৩ এপ্রিল সকালে ভিক্টিমের বাবা মোক্তার হোসেন বাসা থেকে কর্মস্থলে চলে যান। দুপুরে মা মনিরা আক্তার রুমা ভিক্টিমকে গোসল করিয়ে ভাড়া বাড়ির খালি বসত ঘরের খাটে শুইয়ে রেখে বাথরুমে নিজে গোসলে যান। গোসল সেরে ঘরে ঢুকে শিশু সন্তান নোমানকে ঘরে না পেয়ে তার মাসহ প্রতিবেশিরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকেন। এসমসয় পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া সুমন-আইরিন দম্পতির কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না এবং তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। ভিক্টিমের মা বিষয়টি পুলিশে জানান এবং পরদিন ওই দু’জনকে আসামি করে বাসন থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি আরো জানান, এরপ্রেক্ষিতে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও নানা তথ্যের ভিত্তিতে ছদ্মবেশে ২মে (বৃহষ্পতিবার) ভোরে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানাধীন চায়না মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে থেকে মোসা. আইরিনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার হেফাজত হতে অপহৃত শিশু আব্দুল্লাহ আল নোমানকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রামে অভিযান চালিয়ে আইরিনের স্বামী আবু সাইদ ওরফে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধারের পর দুপুরে নোমানকে তার বাবা-মার কাছে তুলে দেয় পুলিশ। এসময় হারানো সন্তানকে ফিরে পেয়ে বাবা-মা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং চোখে আনন্দাশ্রু বেরিয়ে আসে। নোমানের বাবা-মা গ্রেপ্তারকৃতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আইরিন পুলিশকে জানায়, নোমানকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির কাজে ব্যবহার করছিল। ছোট শিশুকে ব্যবহার করে ভিক্ষা করা হলে মানুষের বেশি সহানুভুতি ও অর্থ পাওয়া যায় বলেই শিশু নোমানকে তারা অপহরণ করে ভিক্ষার কাজে ব্যবহার করছিল।

প্রেসব্রিফিংকালে ভিক্টিমের বাবা-মাসহ জিএমপি’র গাজীপুর সদর জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার ফাহিম আসজাদ, বাসন থানার এস.আই. নাজমুল হক প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।