স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী।

রোববার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ র‌্যালি নিয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করে সমাবেশ শেষ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ওয়ান টু থ্রি ফোর, অকোপেশান মোর’, ফাইভ সিক্স সেভেন এইট, ইসরাইল টেরোরিস্ট’, ইসরাইলের দোসররা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন এবং বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবেশে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাখাওয়াত জাকারিয়া বলেন, আজকের এ সংহতি সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি জানান দেয়, বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিলিসি্তনের মানুষের জন্য কতটা মর্মাহত। সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে, ইসরাইলের বিরোধিতা করছে। এটা শুধু ফিলিসি্তনের পক্ষের লড়াই নয় বরং এটা সারা বিশ্বের আর্তমানবতার জন্য লড়াই। বাংলাদেশের পাসপোর্টে কিছুদিন আগেও ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ উল্লেখ ছিল কিন্তু সেটা এখন তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের পাসপোর্টে আবার ‘এক্সেপ্ট ইসরাইল’ শব্দটি যুক্ত করা হোক।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি জোবায়ের বলেন, ওই জায়নবাদদের এসব কাজের বিরুদ্ধে যখন আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল তখন তাদের ওপর আমেরিকা সরকার পেটুয়া বাহিনী লেলিয়ে গ্রেফতার ও হেনস্তা করে। এমনকি তাদের অনেককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জায়নবাদের দোসরদের মুখে থুতু নিক্ষেপ করি। আমরা চাই অতি দ্রুত এই ফিলিসি্তনি মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলা সমাপ্ত হোক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হোক।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, এখন পর্যন্ত ফিলিসি্তনের ৩৪ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। যারা নিরীহ, যাদের কোনো অপরাধ নেই। এই নিরীহ মানুষের ওপর বর্বরোচিত হামলার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

আইন বিভাগের শিক্ষক নকিব নাসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যে আয়োজন করেছে আমি এটাকে সমর্থন জানাতে এসেছি। ফিলিসি্তনকে সমর্থন জানাতে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন নেই, একজন মানুষ হলেই যথষ্টে। এমন গণহত্যা বিশ্বের সব ইতিহাসকে ভেঙে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোনো যুদ্ধে এত নারী-শিশু এর আগে কখনও হত্যা হয়নি। ফিলিসি্তনের পক্ষে পুরো বিশ্বে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে শরিক হওয়া উচিত।

ঢাবির ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, আমাদের এ আন্দোলন মানবতার বিরুদ্ধে বিষফোঁড়া ওইসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তথ্যপ্রমাণ বহুল গণহত্যা এর আগে বিশ্ববাসী কখনও দেখেনি।

এই পরিমাণে তথ্যপ্রমাণসহ গণহত্যা দেখার পরেও বিশ্বের মোড়লরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে এ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাবি শিক্ষার্থী জয়েন উদ্দিন তন্ময়, শেখ তাওহিদ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ প্রমুখ।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত থেকে ফিলিসি্তনি মানুষ ও আন্দোলনরত আমেরিকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ফিলিসি্তনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ আব্দুল্লাহ সালমান ও তার বন্ধুরা গান পরিবেশন করেন।

এছাড়াও ফিলিস্তিনের পক্ষে কবিতা আবৃত্তি করেন আবিদ হাসান রাফি, হাসিবুর রহমান, শাহিনুর রহমান। অতি দ্রুত ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ করে, গণহত্যার সঙ্গে সংশি্লষ্টদের বিচারের আওতায় এনে বিশ্ব শানি্ত প্রতিষ্ঠার দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করার এবং গ্রেফতারকারীদের মুক্তির দাবি জানান ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশের ডাক ছাত্রলীগের : স্বাধীন ফিলিসি্তন ইসু্যতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র-আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজ সোমবার দেশব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হবে। শনিবার বিকালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সাদ্দাম হোসেন ও আসিফ ইনান বলেন, নিরীহ-নিরপরাধ ফিলিসি্তনি নাগরিকদের হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন পরিচালনা করছেন, বাধা-নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন তা গভীরভাবে অনুধাবন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম দিক ছিল ফিলিসি্তনের স্বাধীনতা অর্জন। একইভাবে তার কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্ব মানচিত্রে যে বলিষ্ঠতার সঙ্গে ফিলিসি্তনিদের অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়-অভাবনীয়।

তারা আরও বলেন, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৪ নম্বর রেজুলেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ নম্বর রেজুলেশনে বর্ণিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে শানি্তর প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন। তাই বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে স্বাধীন ফিলিসি্তন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করছে।