রাজশাহীতে ছাত্রশিবিরের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে র‌্যাব। পরে তাদেরকে মহানগরীর মতিহার থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ডাকাতি করার প্রস্তুতিকালে ছাত্রশিবিরের ওই নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাব-৫ -এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌ জানান, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, টেন্ডারবাজি ও জমি দখলের জন্য রাজশাহীতে ছাত্রশিবির একটি বাহিনী গঠন করেছে। এই বাহিনীর নাম ‘মিজু গ্যাং’। ডাকাতির প্রস্তুতিকালে র‌্যাব এই মিজু বাহিনীর ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তলোয়ারসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। অন্য ১০ জন হলেন- বাহিনীর প্রধান নগরীর খোঁজাপুর এলাকার মিজানুর রহমান (৩০), একই এলাকার মো. বকুল (৩৮), ডাঁসমারী পূর্বপাড়া এলাকার ঈমান (২৪), ধরমপুর পূর্বপাড়ার মো. শাকিব (২৫), মো. রবিন (২০), মো. রাব্বি (২৪), মো. অনিক (২১), ধরমপুরের ইয়ামিন আলী (২৮), মো. আমান (২২) এবং জেলার চারঘাট উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বিপ্লব আলী (২২)।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-৫-এর রাজশাহীর সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি দল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ১৮টি ধারালো হাসুয়া, ৭টি ধারালো তলোয়ার, দুটি চাকু, তিনটি কাটার হাতল, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি খেলনা পিস্তল, হ্যান্ড গ্রেনেড সদৃশ সিমেন্ট দিয়ে বানানো ৫৩টি ছোট ছোট ব্লক ও তিনটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়া বাহিনীর প্রধান মিজানুর রহমান মহানগর ছাত্রশিবিরের আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। অভিযানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিবিরকর্মী রমজান আলী পালিয়ে গেছেন। এই ‘মিজু বাহিনী’ মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আহমেদ আব্দুল্লাহ ও সেক্রেটারি রোহান কবিরের নির্দেশনায় পরিচালিত হতো। প্রায় একমাস ধরেই গ্যাংয়ের সদস্যদের গতিবিধি নজরে রেখেছিল র‌্যাব। সবশেষ এই ‘মিজু গ্যাং’ একটি ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, এই বাহিনীর সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও অন্যের হয়ে জমি দখলের কাজ করত। কোনো ব্যক্তি বাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করতে হলেই তাদের চাঁদা দিতে হতো। চাঁদা না দিলে দলবলে হামলা চালাত বাহিনীর সদস্যরা। তারা টেন্ডারবাজি ও ছিনতাইয়েও জড়িয়ে পড়েছিল। এরা মতিহার থানার ধরমপুর পূর্বপাড়া এলাকায় রমজানের নির্মাণাধীন ভবনে একটি অফিস বানিয়েছিল। সেখানে ছিল অস্ত্রের মজুদ। এছাড়া গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও দুটি স্থান থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বাহিনীর সদস্যরা সিমেন্ট দিয়ে তৈরি গ্রেনেডের মতো ব্লক ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। তারা একটি ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব অধিনায়ক আরও জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মিজু গ্যাং শিবিরের জন্য সদস্য সংগ্রহ করত। এভাবে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও বিস্তৃতি করছিল। গ্রেপ্তার ১১ জনের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।