গাজা যুদ্ধ শেষ করে ইসরাইলকে একটি ‘পরিপূর্ণ বিজয়’ এনে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর এ জন্য তাদের প্রধান লক্ষ্য গাজার শাসকগোষ্ঠী ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের গাজা-প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হত্যা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম মিডলইস্ট আইকে এমনটাই বলেছেন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা।

শনিবার প্রকাশিত এ খবরে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডলইস্ট আইকে বলেছেন, সিনওয়ারকে খোঁজার কার্যক্রম বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা মনে করছে, সিনওয়ার গাজার নিচে গভীর সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডলইস্ট আইকে জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসন এখন ধারণা করছে সিনওয়ার মিসরের সিনাই উপত্যকায় লুকিয়ে রয়েছে। তবে তিনি সেখান থেকে লেবানন বা সিরিয়ায় সরে যেতে পারেন।

তবে হোয়াইট হাউস মিডলইস্ট আইকে জানিয়েছে, মার্কিন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এ সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছেন, তিনি সিনওয়ার সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে চান না।

বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বিশেষ কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপারে কথা বলতে চাননি। কিন্তু বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দাবাহিনী সিনওয়ার সবশেষ অবস্থানের তথ্যের ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে।

ওই কর্মকর্তাদের মতে, বাইডেন প্রশাসন সিনওয়ার সবশেষ অবস্থান শনাক্তের ব্যাপারে এক মাস পিছিয়ে রয়েছে। ওই স্থানটি ছিল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায়ই।

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল, যিনি চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাও ছিলেন, তিনি মিডলইস্ট আইকে বলেনে, সিনওয়ারের শেষ অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার না হতে পারার বিষয়টি ‘খুবই খারাপ’।

সময়সীমা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এক মাস মানে আপনি সবশেষ অবস্থানের ধারেকাছেও নেই।’

গত মাসে একজন হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন যে সিনওয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং বিদেশে অবস্থানরত তাদের নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করেছেন।

প্যান-আরব গণমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদিদকে (দ্য নিউ আরব) হামাস কর্মকর্তা বলেন, সিনওয়ার সব সময় সুড়ঙ্গে অবস্থান করছেন না, যুদ্ধক্ষেত্রেই দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে ইসরাইল দাবি করেছিল যে সিনওয়ার সব সময় সুড়ঙ্গে অবস্থান করছেন।

সে বিষয়টাই পরিষ্কার করেন ওই কর্মকর্তা।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, সিনওয়ার অবস্থান নিশ্চিত করা এখন মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। কারণ বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে এর মাধ্যমে ইসরাইলের বিজয় নিশ্চিত করে তাদের যুদ্ধ বন্ধে চাপ দেয়া যাবে।

গত সপ্তাহে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের সাথে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমি বিবিকে (ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) বলেছি, আমরা আমেরিকায় যে ভুল করেছিলাম, আপনি সে ভুল করবেন না। আমরা চেয়েছিলাম বিন লাদেনকে ধরতে। আমরা এখন আপনাকে সাহায্য করব সিনওয়ারকে পেতে।’

সিনওয়ার ও আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মধ্যে তুলনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সিনওয়ারকে খুঁজে বের করা নিয়ে যে ভীষণ বিপদে আছে তাই প্রকাশ পেয়েছে।

বিন লাদেনকে খুঁজে পেতে সময় লেগেছিল ১০ বছর। যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায় তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তানে। যে স্থানটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী মিত্রদের সামরিক ঘাঁটির মাত্র এক কিলোমিটার দূরে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র চায় ইসরাইল রাফায় নির্বিচার আক্রমণের আগে হামাসের প্রধান দুই কর্মকর্তা সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে খুঁজে বের করুক। মোহাম্মদ দেইফ হলেন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান।

বাইডেন প্রশাস অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইসরাইলকে সামরিক ও গোয়েন্দা সমর্থন দিয়ে আসছে।

এদিকে, রোববার মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস খবর দিয়েছে যে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে সিনওয়ার রাফাহতে নেই। তবে খান ইউনিসে থাকার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এ শহরটি ইসরাইলি বাহিনী গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে।

এদিকে, আরেক মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট সোমবার খবর দিয়েছে যে রাফাহতে অভিযান না চালানোর পরিবর্তে আমেরিকা ইসরাইলকে নতুন করে গোয়েন্দা সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে হামাস নেতাদের খুঁজে বের করা যায়।

সূত্র : মিডলইস্ট আই