বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অটোরিকশা চালকদের ওপর সরকার স্টিম রোলার চালাচ্ছে। অটোরিকশা বন্ধের মধ্য দিয়ে গরিবের আহার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে গরিবদের ওপর জুলুম চালাচ্ছে।

সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রমিক দল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, দরিদ্র অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ন চাঁদাবাজি করে তাদেরকে স্বর্বশান্ত করেছে। সরকার দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে। অবিলম্বে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানো হবে।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভ্যান বন্ধ করে দিলেন ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি নিজেই বলেছেন তার হাতের যে ঘড়ি এর দাম অনেক টাকা। অনেক মানুষ বলে তার দাম ৫০ লাখ টাকা, তিনি যে সানগ্লাস পড়েন সেটারও অনেক দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যার সানগ্লাসের দাম এতো, ঘড়ির দাম ৫০ লাখ টাকার উপরে তিনি এই ব্যাটারি চালিত রিকসাওয়ালাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি কিভাবে তাদের মর্ম বুঝবেন। উনি কি জানেন এরা একবেলা খায় নাকি দুই বেলা খায়? তারা যে পরিশ্রম করে রিকসা চালায় সেই টাকা দিয়ে, সেই উপার্জন দিয়ে তার সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে পারে কিনা?

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, তাদের সন্তানরা তো বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। কেউ বলে দুবাইয়ে, কেউ বলে কানাডায়, কেউ বলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম এবং বিভিন্ন ধরনের বাড়ি তারা সেখানে নির্মাণ করেছেন। তারা তো এদের বিষয়ে জানে না। তারা এক বেলা চাল কিনতে পারছে না। দেশে আলুর দাম এই সিজনেও ৫০ টাকা- এটা কি তিনি জানেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব জানেন না উনার নেত্রী শেখ হাসিনাও জানেন না। কারণ ওনাদের প্রত্যেকটি নেতা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন বিদ্যুৎ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে। বিভিন্ন উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। শুধু টাকা পাচারের এই আরব্য উপন্যাসের কাহিনী প্রতিদিন আমরা সংবাদপত্রের পাতায় পড়ছি। সুতরাং তারা কি করে ওই ব্যাটারি চালিত রিকসাওয়ালাদের করুন কাহিনী জানবে।

রিজভী বলেন, এই ব্যাটারি চালিত রিকশা নিশ্চয়ই কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এই আমদানি করার লাইসেন্স কে দিল? ঢাকাসহ প্রতিটি শহরে ব্যাটারি চালিত যান চলাচল করছে, তাদেরকে এই রোড পারমিশন কারা দিল? আপনার সরকারই দিয়েছে। এগুলো যারা ইমপোর্ট করেছে তারা তো আওয়ামী লীগের লোক। তারা তো আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী। আর যারা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছে তাদেরই দোষ হয়ে গেল? তারপরও এরা কিন্তু এমনি এমনি চালাতে পারে না, আপনার প্রশাসনের লোকদেরকে টাকা দিতে হয়, স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে হয়। এতো ঘাটে ঘাটে টাকা দেওয়ার পরও যতটুকু তাদের উপার্জন হয় সেটা দিয়ে কোনোরকমে তারা দিন যাপন করে। আর এদের উপরেই আপনারা স্টিম রোলার চালাচ্ছেন। এদের উপরে আওয়ামী লীগের তরবারি মাথার উপর ঝুলছে।

রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি গরিবের আহার কেড়ে নিয়ে, ভাত কেড়ে নিয়ে রাজত্ব করবেন, আপনারা স্বর্গে বসবাস করবেন, ওই স্বর্গ থেকে আপনাদের বিদায় নিতেই হবে। ওই স্বর্গে আপনারা আর বেশি দিন বসবাস করতে পারবেন না।

শেয়ার বাজারেও নতুন করে ধ্বংসে নেমেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তরুণ শিক্ষিত যুবকরা, অল্প আয়ের মানুষেরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে। সেই শেয়ার মার্কেটেও আবার নতুন করে এমন পতন হচ্ছে, ওই পতন থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না শেয়ার মার্কেট। এতে বেকার হচ্ছে তরুণরা যুবকরা। তারা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) অনেক কথা বলেন-আমি এই করেছি, সেই করেছি, এতো উন্নয়ন করেছি। উনার হচ্ছে গলাবাজি আর উনার নেতা মন্ত্রীদের চাপাবাজির কথা। দিন দিন কত মানুষকে যে ওনারা গরীব বানিয়েছেন, সেইটা তারা কোনদিনও বলেন না। তারা বলবেন কি করে এবারও বাজেটে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত থেকে সব খাতে। কারণ ভর্তূকি না দিলে বিদ্যুৎখাতের যে দেনা সেই দেনা তারা পরিশোধ করতে পারবে না। আইএমএফ থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদেরকে শর্ত দিচ্ছে। শর্ত দেওয়ার পরেও তারা ভর্তুকি বাড়াচ্ছে। এই ভূর্তকি কে দেয়? এটা কি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার টাকা দিয়ে চলে? শ্রমজীবী মানুষের ঘরের টাকায় এই ভর্তুকি দেওয়া হয়।

রিজভী বলেন, আজকের এই দিনে ঘুমন্ত চা শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় ইংরেজ শাসকদের এ দেশীয় তাবেদার পুলিশ বাহিনী। আজো এ দেশের মানুষ নিপীড়িত, নির্যাতিত। আজও দেশের মানুষকে এক বেলা খাবারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সেদিনের সেই মুল্লুক চল আন্দোলন যে শিক্ষা দিয়েছে, সেই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিপীড়িত নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষ লড়াই করছে।