পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এছাড়া অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর হোসেন দুলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ জব্দ ও ফ্রিজ না করা গেলে, যেকোরো সময় তা হস্তান্তর হয়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।

শুনানির পর আদালতের দেওয়া আদেশে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী, সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হলো। আবেদন অনুযায়ী ৮৩টি জমির দলিল ও ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। আদালতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। এ সময় দুদকের পক্ষে আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‍্যাবের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এরপর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এই আইজিপি।

জাতীয় ওই দৈনিকে বেনজীরের ঘরে ‘আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে তার নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃস্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়া তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানে রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠা জায়গাজুড়ে ডুপ্লেপ বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের চাকরি জীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলন করেছেন মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা।