বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের গাড়িতে চড়ে সংবর্ধনা নেওয়ায় বিতর্কের মুখে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে করে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আমি যদি জানতাম তাহলে সাবধানতা অবলম্বন করতাম। তারপরও আমার এ অসাবধানতা ও ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি দেশবাসীর মনে আমি কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি, অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে থাকি সেজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে আমার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। এত লোকের সমাগম হয়েছে যে কোনো গাড়ি প্রবেশের সুযোগ ছিল না। আমি বিমানবন্দরে নামার পরে কিছু গাড়ি দেখেছি, ভেতরে আমাদের নেতাকর্মীরা বলছেন এটাতে উঠেন। উঠেছি। এই গাড়িটি কার সেই মুহূর্তে আমি চিন্তা-ভাবনার মধ্যে ছিলাম না, অনেকটা আবেগ আপ্লুত ছিলাম, ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছিলাম। আমার মনের মধ্যে ছিল না কার গাড়িতে উঠছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এই সংবাদ প্রকাশের পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমার এলাকার এক ছোট ভাইয়ের উক্ত কোম্পানির (এস আলম) জমি-জমা দেখার কাজ করেন। সেও অন্য সবার মতো আমাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে যায়। সেও জানত না আমি তার গাড়িতে উঠব এবং আমিও জানতাম না ওই গাড়িতে আমি উঠব।’

ফ্যাসিবাদকে দীর্ঘায়িত করার কাজে সরাসরি জড়িত এবং সহযোগিতাকারীদের তথ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতেও আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের সবার উচিত পতিত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ সংবাদ প্রকাশ করা। যারা গত ১৫-১৭ বছরে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, আইন ও বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ে পচন ধরেছে ‘

তিনি বলেন, ‘এখানে ফ্যাসিবাদের যে সাক্ষর রেখেছে ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য, সে বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। আমাদের অগ্রাধিকার সেটা। আমরা যেন মনোযোগ দেই যে, যারা গুম, খুন ও অপহরনের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য বিভিন্ন স্তর থেকে সহযোগিতা করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করি। তাদের হয়তো কেউ কেউ হয়তো গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে যথাযথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত কোনো গুমের রহস্য উন্মোচন করা যাচ্ছে না।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় ২৫ দিনের মতো। এখানে দেশবাসীর যে আকাঙ্ক্ষা ছিল গুম, খুনের যে আস্তানা খুঁজে বের করা, যারা এসবের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করা, কারা বিভিন্ন বাহিনী বা সরকারের বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করি, গুমের পর যারা এখনো জীবিত আছে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি-এগুলো অগ্রাধিকার দেই।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের শাসন দীর্ঘায়িত করতে যারা বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রকে বিনষ্ট করেছে, যারা ব্যবহার করেছে ও বিচারবিভাগসহ সর্বত্র- তারা কারা? তাদের বিভিন্ন অপরাধের বিবরণ প্রকাশ করি। যারা সরকারি চাকরিতে সেটা বিভিন্ন বাহিনী বা আমলাতন্ত্রে- রাজনৈতিক নেতার মতো আচরণ করে ফ্যাসিবাদকে দির্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছে তাদের চিহ্নিত করি।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মানের জন্য সবাই তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের হাতকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত মনে করে এবং তারা যেন জনগনের সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র কাঠামোর যে সংস্কার আমাদের দরকার- সে সংস্কার কাজে মনোযোগ দিতে পারে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এগুলো পরিহার করা ভালো হবে বলে আমরা মনে করি। তারপরও আমার অসাবধানতা ও অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি।’

১০ বছর পর গত বুধবার নিজ এলাকা কক্সবাজারের পেকুয়ায় যান সালাহউদ্দিন আহমেদ। ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গাড়িবহর নিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি পৌঁছান সালাহউদ্দিন। পরে জানা যায়, তিনি যে গাড়িতে চড়ে বাড়িতে গিয়েছেন, সেটি এস আলম গ্রুপের নামে নিবন্ধিত। বিষয়টি সামনে আসার পর অনেক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।