1শ্রমিক সংগঠক আমিনুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ‘পলাতক’ মোস্তাফিজুর রহমানকে আসামি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দেওয়া অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিক সংগঠন কমিটি ফর জাস্টিস ফর আমিনুল।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগপত্রটি বানোয়াট, ভুল ও মিথ্যা। এতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। অভিযোগপত্র মূল খুনিকে রক্ষার শামিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার-সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে তড়িঘড়ি করে এ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স (ডিআরইউ) ইউনিটির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন নিহত আমিনুলের সহকর্মী বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার।

গত নভেম্বর মাসে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। তবে আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের বিষয়টি আমিনুলের স্বজনেরা জানেন না। আর তাঁর সংগঠনের সহকর্মীরা জেনেছেন কয়েক দিন আগে। কিন্তু এখনো তাঁরা অভিযোগপত্রের অনুলিপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কল্পনা আক্তার জানান, তদন্ত শেষে যে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে, তাতে আমিনুল হত্যাকাণ্ডে কেবলমাত্র মোস্তাফিজুর রহমানকে সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনা মূল খুনিকে রক্ষার শামিল। তিনি বলেন, ‘আমিনুলের পরিবার ও তাঁর সহকর্মীদের পক্ষ থেকে আমরা এ অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করছি। এ বিষয়ে আইনগতভাবে প্রতিবাদ জানানো হবে।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, আমিনুলকে যেভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে এটা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। চাপে পড়ে একটি বানোয়াট, ভুল ও মিথ্যা অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। জিএসপি ফিরে পেতে সরকার তড়িঘড়ি করে এ অভিযোগপত্র দিয়েছে। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি।’ আমিনুল হত্যার বিচার করা না হলে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামবেন বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পোশাকশ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সেখানে সালাউদ্দিন স্বপন, তাহমিনা আহমদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা ছিলেন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা এলাকায়। বেওয়ারিশ হিসেবে আমিনুলের লাশ উদ্ধারের পর ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মিয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে আমিনুলের ভাই রফিকুল ইসলাম এ ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান ও বোরকা পরা অজ্ঞাতনামা এক নারীকে আসামি করে ঘাটাইল থানায় আরেকটি এজাহার দেন। এতে বলা হয়, ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমিনুলের আশুলিয়ার সংগঠনের কার্যালয়ে যান মোস্তাফিজুর। সঙ্গে ছিলেন ওই নারী। তাঁরা আমিনুলকে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এজাহারটি পুলিশের করা হত্যা মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ঘাটাইল থানা, পরে টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মামলাটির তদন্তভার সিআইডিতে স্থানান্তরিত হয়। এক বছর তদন্ত শেষে গত নভেম্বর মাসে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর মামলার অভিযোগপত্র টাঙ্গাইল জেলা আদালতে জমা দেন। আমিনুল হত্যার পর থেকেই ‘পলাতক’ মোস্তাফিজুর।