2দৈনিক বার্তা : বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ধান্ধাবাজদের ক্ষেত্র উল্লেখ করে গভার্নেন্স অ্যাডভোকেসিফোরাম’র চেয়ারপারসন ড.কাজী খলীকুজ্জমান বলেছেন,দেশে এখন ধান্দাবাজের অর্থনীতি প্রচলিত রয়েছে। ধান্দাবাজের এই চক্রটি  বেশ শক্তিশালী।

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে দ্য  ডেইলি স্টার ভবনে ‘বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।

খলিকুজ্জামান বলেন, বাজেট প্রণয়নে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সব সবময় প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ধান্দাবাজের অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং এতে আঘাত করতে হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাজেট  ঘোষণায় সব সময় স্বার্থান্বেষী মহল প্রভাব বিস্তার করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু কত টাকা খরচ হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দ না দিয়ে, কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দ দিতে হবে। এ জন্য বাজেট বাস্তবায়নের তদারকি করতে হবে। এটি কে করবে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বাজেট বাস্তবায়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভবনের পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা জালের কর্মসূচিগুলিতে কেন্দ্র থেকে প্রেরিত  যে অর্থ ও দ্রব্যাদি বণ্টিত হয়, সাধারণত তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিদ্র পথে অপসৃত হয়ে যায়। সঠিক ব্যক্তির কাছে তা  পৌঁছে না। এ  ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

বছরভিত্তিক জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রাখা, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহ  গভর্নেস অ্যাডভোকেসি  ফোরাম’র পক্ষ  থেকে এম এম আকাশ ৭ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন।

এসময় প্রধান অতিথীর বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্থানীয় সরকার ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই এখানে বেশি  বেশি গুরুত্ব  দেয়া জরুরী। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট বাড়ানো দরকার। তাই কর আদায়ও বাড়াতে হবে । এতে করে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নতি হবে।
মান্নান বলেন, গণতন্ত্র ও  ভোটাধিকার  টেকসই হলে স্থানীয় সরকার  টেকসই হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন,  যেখানে  বেশি মানুষ বাস করবে  সেখানে  বেশি অর্থ ব্যয় হবে। আবার  যেখানে পিছিয়ে পড়া  বেশি  সেখানেও  বেশি অর্থ ব্যয় হবে, এটাই স্বাভাবিক।

মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহাবুব আরা  বেগম গিনি, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.  তোফায়েল আহমেদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এম এম আকাশ বলেন,স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা জালের কর্মসূচিগুলোতে  কেন্দ্র  থেকে পাঠানো  যে অর্থ ও দ্রব্যাদি বণ্টিত হয়, তার এক তৃতীয়াংশ ছিদ্র পথে  বের হয়ে যায়। সঠিক ব্যক্তির কাছে না  পৌঁছে বেঠিক ব্যক্তির কাছে  পৌঁছায় অথবা অন্য  কোথাও উধাও হয়ে যায়।

এজন্য তিনি স্থানীয় পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভবনের পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ ছিদ্র পথগুলো (ফুঁটোগুলো) বন্ধের আহ্বান জানান।সম্প্রতি বাংলাদেশে চুরি-দুর্নীতি-অপব্যয় এবং জবাবদিহিতার অভাব ও স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে নাগরিক সমাজে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

এ সময় তিনি বিশ্বব্যাংকের অফিসিয়াল এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা জালের কর্মসূচিগুলিতে কেন্দ্র  থেকে  প্রেরিত যে অর্থ ও দ্রব্যাদি বণ্টিত হয়, সাধারণত তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছিদ্র পথে অপসৃত হয়ে যায়, সঠিক ব্যক্তির কাছে না  পৌঁছে বেঠিক ব্যক্তির কাছে  পৌঁছায় বা অন্যত্র কোথাও উধাও হয়ে যায়। সুতরাং পাইপে পানি প্রবাহ বাড়ানোই যথেষ্ট হবে না, পাইপের ফুঁটোগুলিও বন্ধ করতে হবে।

এম এম আকাশ বলেন,স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।সদিচ্ছা ও সদিচ্ছার বাস্তবায়ন ক্ষমতা এক জিনিস নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের ঘোষণায় সদিচ্ছার প্রকাশ দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পিছিয়ে আসার অসংখ্য নজিরও রয়েছে।

প্রবন্ধে এম এম আকাশ ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার, বাজেটের প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধিসহ ইউনিয়ন, উপজেলা,  পৌরসভা, জেলা এবং সিটি করপোরেশন পর্যায়ের উন্নয়ন বাজেটের প্রস্তাবিত মোট থোক বরাদ্দের প্রকৃতি তুলে ধরেন।

এসময় তিনি বলেন,  কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবিত অথব প্রকৃত বরাদ্দ দুই  ক্ষেত্রেই প্রতিবছর  যে হারে বাড়ছে অথাব কমছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমানুপাতে স্থানীয়  থোক বরাদ্দ বাড়ছে অথবা কমছে না। অর্থাৎ  কেন্দ্রের  থোক বরাদ্দের কৃপার উপর নির্ভর করে স্থানীয় পর্যায়ে আর্থিক সম্পদের যোগান সম-অনুপাতে বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রবন্ধে গভর্নেস অ্যাডভোকেসি  ফোরাম’র পক্ষ  থেকে এম এম আকাশ আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে ৭ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে-স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯’র ৬২ অনুযায়ী একজন হিসাব সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা, আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত (১২টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৩টি দপ্তর) এবং ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তরযোগ্য (৭টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৯টি দপ্তর) বিষয় কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় আইনি সংশোধন, ভূমি হস্তান্তর করের ৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ দেওয়া, কার্যকর অর্থে  জেলা বাজেট প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ ও  জেলা পরিষদকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করা, বছরভিত্তিক জাতীয় বাজেটের ৫ শতাংশ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ রাখা, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্র পরিচালনার সব  ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গভার্নেন্স অ্যাডভোকেসি  ফোরাম’র সমন্বয়কারী মহসিন আলীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- উপজেলা পরিষদ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’র (উজফ্যাব) আহ্বায়ক আতাউর রহমান আতা, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ  ফোরাম’র (বিইউপিএফ) সভাপতি মাহবুবুর রহমান টুলু, অঙ্গীকার সমাজ বিকাশ  কেন্দ্রের প্রধান পরিচালক মুহম্মদ হিলালউদ্দিন, গ্যাড অ্যালায়েন্স সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, সুপ্র’র পরিচালক এলিসন সুব্রত বাড়ৈ, গভার্নেন্স কোয়ালিশন’র ফ্যাসিলিটেটর  মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।