দৈনিক বার্তাঃ তিন দফা দাবিতে ডাকা সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের ধর্মঘট ৯ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ।বুধবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে ধর্মঘট স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম খসরু।তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
যে ৩ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিলো ৯ তারিখের মধ্যে সেসব দাবি মেনে নিয়ে বিআরটিএ’র প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাসের ভিত্তিতেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান ফরিদুল ইসলাম খসরু।
বুয়েটের সুপারিশ অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশার ইকোনমিক লাইফ বাড়িয়ে ১৫ বছর করাসহ ৩ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট আহ্বান করে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদ। আর এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭২ ঘণ্টার এ ধর্মঘট শুরু হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
অটোরিকশার বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে এই ধর্মঘট ডাকে মালিক সমিতি।ধর্মঘটের মধ্যেও মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রাস্তায় অল্পসংখ্যক সিএনজি-চালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ব্যক্তি-মালিকানাধীন সিএনজি-চালিত কিছু অটোরিকশা চলছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে ঢাকায় অটোরিকশা নামানোর সময় এর বয়সসীমা নয় বছর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। মালিকদের চাপে তা দুই দফা বাড়িয়ে ১১ বছর করা হয়। এখন আরও চার বছর বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছেন মালিকেরা। তিন দফা দাবিতে ডাকা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকরা। অনেক মালিকও আর ধর্মঘট পালন করার পক্ষে নন।এ অবস্থায় বুধবার দ্বিতীয় দিনে ধর্মঘট পালনে কিছুটা শিথিলতা দেখা গেছে। তবে এ ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠে।
এদিকে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী। বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে চরম ভোগন্তিতে পড়ে অফিসগামীরা। সকাল থেকে একদিকে পাবলিক বাসে প্রচণ্ড ভিড়, অন্যদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা কম থাকায় অফিসগামীরা এই ভোগান্তিতে পড়েন।
সকালে রাস্তায় নেমেই বিপাকে পড়েন অফিসগামী যাত্রীরা। অটোরিকশা না পেয়ে অনেককেই বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ হিউম্যান হলার বা রিকশার শরণাপন্ন হন। বিকেলে অফিস ফেরত যাত্রীদের পড়তে হবে আরও বেশি ভোগান্তিতে- এ আশঙ্কা করেছেন অনেকেই।বৃষ্টির কারণে নাস্তানাবুদ হন অনেকেই। বিশেষ করে নারী ও রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তীতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্য রিলিজ পাওয়া রোগী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সারোয়ার হোসেন। তিনি জানান, সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষা করে কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টার মধ্যে দু’টি অটোরিকশা এলেও চালকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়নি। একটি অটোরিকশা এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
বিদেশফেরত ছেলেকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যেতে শাহবাগে অপেক্ষা করছিলেন রোকসানা বেগম। তিনি বলেন, কোনো পাবলিক বাসে সিট পাচ্ছি না। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করে কোনো অটোরিকশা না পেয়ে টেক্সিক্যাবকে ফোন দিয়েছি।সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করার পক্ষে নন অধিকাংশ চালকই। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন মালিকদের একটি পক্ষ। চালকরা বলছেন, মালিকরা তাদের স্বার্থে ধর্মঘট ডেকেছেন। সেখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই।
অন্যদিকে মালিকদের একটি অংশ বলছেন,মঙ্গলবার রাতে বিআরটিএ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ইকোনমি লাইফ ১৫ বছর করে একটি প্রজ্ঞাপন জারির পর ধর্মঘট চালানোর আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা বলছেন, যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।
কিন্তু মালিকদের একটি পক্ষ বলছেন, বিআরটিএ থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তাতে নানা জটিল শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্ত মেনে রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে না।এর আগে সকালে মালিকদের ধর্মঘটকে অবৈধ দাবি করে বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে ঢাকা জেলা ফোরস্ট্রোক অটোরিকশা ড্রাইভার ইউনিয়ন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে চালকরা অবিলম্বে মালিকাদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটকে অবৈধ দাবি করে ঢাকা জেলা অটোরিকশা-অটোটেম্পু-মিশুক-যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের সঙ্গে চালকদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, শ্রম আইনে মালিক সমিতি কোনোভাবে ধর্মঘট ডাকতে পারে না। শ্রমিক ইউনিয়ন,শ্রম দফতর, বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ধর্মঘট ডাকাকে বেআইনি দাবি করে গোলাম ফারুক বলেন, গরিব শ্রমিকদের যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট আমরা মানি না।তিনি মালিকদের কাছে জানতে চান, এই তিনদিন কী আমাদের সংসারের দায়ভার আপনারা নেবেন?
সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক আব্দুল খালেক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দাবি প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিআরটিএ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এখন ধর্মঘট তুলে নেওয়া উচিত।এর আগে সকালে মালিকদের এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মালিকরা সরকারকে জিম্মি করে তাদের দাবি আদায় করতে চাচ্ছেন। এসব মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যোগাযোগমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ১১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এ গাড়িগুলো চলাচলের মতো অবস্থায় নেই। এ অবস্থায় এসব অটোরিকশার মেয়াদ আরও ৪ বছর বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিষয়টি নিয়ে মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সমন্বয়ে একটি গণশুনানির দাবি জানান তিনি।