3_124175

দৈনিক বার্তা: ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন হত্যা মামলায় মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (সদ্য প্রত্যাহৃত) জাহিদুর রহমান খান ও পুলিশের সোর্স নাসিম শেখকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার বিকালে জাহিদকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানা পুলিশ। এদিকে মিরপুর থানায় পুলিশের দায়েরকৃত এজাহারে নানা ফাঁকফোকর রয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহত সুজনের পরিবারের সদস্যরা। তারা অভিযোগ করেন, জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারেন সেজন্য পুলিশ সাজানো এজাহার দায়ের করেছে। এই এজাহারের প্রতি তাদের আস্থা নেই। আদালতে তারা মামলা করবেন। নিহত সুজনের মা শাহিদা আক্তার বলেন, তার ছেলেকে ঝুট ব্যবসায়ী মোহন ও এসআই জাহিদ হত্যা করতে পারে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। অথচ পুলিশের দায়ের করা এজাহারে মোহনের নাম নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম দৈনিক বার্তা কে বলেন, এসআই জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মোহনের নাম পাওয়া গেলে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, এসআই জাহিদ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্যের সূত্র ধরে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আসামিদের হাজির করে প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড চান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মজুর করেন। এ সময় আদালতের এজলাস থেকে আসামিদের কোর্ট গারদে নেয়ার পথে সেখানে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী এবং নিহতের স্বজনরা ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলে চিৎকার করতে থাকেন।

রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার রাতে ব্যবসায়ী সুজনকে তার ধানমণ্ডির শংকরের জাফরাবাদের বাসা থেকে মিরপুর থানায় ধরে নিয়ে যান এসআই জাহিদ। যাওয়ার পথে সন্তানের সামনেই সুজনকে অমানুষিক নির্যাতন করেন জাহিদ। সুজনের ভাই মাকসুদুর রহমান সুমন বলেন, প্রতি মাসে এক লাখ টাকা চাঁদা না দিলে তার ভাইয়ের ঝুট ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন এসআই জাহিদ। চাঁদা না দেয়ায় তার ভাইকে হত্যা করা হয়। সুজনের পরিবার জানিয়েছে, পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহার এমন করে সাজানো হয়েছে যাতে করে থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তা রেহাই পেয়ে যান। থানা পুলিশের ওপর তাদের আস্থা নেই বলে তারা থানায় মামলা করতে যাননি। তারা আদালতে মামলা করবেন। ওই মামলায় মিরপুর থানার ওসি সালাহ উদ্দীন খান ও পরিদর্শক তদন্ত মঈনুলকে আসামি করা হতে পারে। সুজনের শ্যালক ওমর ফারুক লুসন বলেন, মিরপুর থানার এসআই রকিবুল ইসলাম খান বাদী হয়ে যে এজাহার দিয়েছেন তাতে শুধু ৩০২/৩৪ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিকভাবে এজাহার করা হলে এ ঘটনায় দণ্ডবিধির অন্তত ১০টি ধারা যুক্ত করতে হতো। কিন্তু পুলিশ ৩০২/৩৪ ধারা উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া এসআই জাহিদকে হত্যাকাণ্ডে কারা সহযোগিতা করেছে তারও কোনো কিছু উল্লেখ নেই। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সুজনকে হত্যার জন্য ভারতে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহদাতের ক্যাশিয়ার মোহন এসআই জাহিদকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এজাহারের কোথাও মোহনের নাম নেই।

সুজনের লাশের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদনে নির্যাতনের ফলেই মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় মিরপুর থানার উপপরিদর্শক রাকিবুল ইসলাম খান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গ্রেফতারকৃত এসআই জাহিদ এবং সোর্সসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেন। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন : এএসআই রাজকুমার, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন, রাশিদুল, সোর্স পলাশ, ফয়সাল এবং খোকন। এরা পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন এএসআই এবং দুজন কনস্টেবল রয়েছেন। সুজনের পরিবার জানিয়েছে, পুলিশের সহায়তায় তারা পালিয়ে গেছেন। জানতে চাইলে ওসি সালাহ উদ্দিন খান বলেন, মঙ্গলবার থেকে এসব পুলিশ সদস্য আর থানায়র আসেননি।

প্রসঙ্গত, উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় কর্মরত থাকাবস্থায় বিহারি ২ যুবককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনার পর তাকে ওই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হলেও পরে মিরপুর থানায় সংযুক্ত করা হয়। ডিবি পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এসআই জাহিদ ইয়াবাসহ গ্রেফতার মিথুন ও জাকিরকে গ্রেফতার করে যে সূত্র ধরে অভিযান চালিয়েছিল সেটি সাজানো কোনো নাটক ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মিরপুর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মিথুন ও জাকির গ্রেফতার ছিল এসআই জাহিদের নাটক। মূলত জাহিদ টাকার বিনিময়ে এ নাটক করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোর্স নাসিম ও পলাশ টাকার চুক্তি করেছে জাহিদের সঙ্গে। সর্বশেষ বুধবার বিকালে গ্রেফতারের আগেও সোর্স পলাশ ও নাসিমের সঙ্গে মিরপুর এলাকায় এসআই জাহিদ বৈঠক করেন। এ দুজন অভিযানের সময় ছিল বলে এসআই জাহিদ স্বীকার করেছেন। সুজনকে নির্যাতনের সঙ্গে তারা জড়িত।