ইতোমধ্যে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, মেজর আরিফুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন –
কর্নেল জিয়াউল আহসান

দৈনিক বার্তা –নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এ জিজ্ঞাসাবাদ চলে। পরে জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (তদন্ত কমিটি) যেসব বিষয় জানার প্রয়োজন মনে করেছে, সেগুলো জানিয়েছি।’ তদন্ত কমিটি আপনার কাছে কি জানতে চেয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা তদন্তনাধীন বিষয়। তাই কিছু বলতে পারছি না।’

নারায়ণগঞ্জের সাত গুম ও অপহরণের ঘটনায় আপনার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত কমিটি কিছু জানতে চেয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল আহসান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা অত্যন্ত দক্ষ। আমি আশা করি তারা প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে পারবেন।’ এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, ‘তদন্তের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঘটনার স্বার্থেই আমরা বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছি না।’ শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ এগুচ্ছে। সামনের দিকে জানতে পারবেন কাকে কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব আর কাকে করব না।’

নূর হোসেনকে ভারতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা জানতে চাইলে মোল্লা বলেন, ‘এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে জানতে পারবেন।’ গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহৃত হন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার চার সহযোগী। প্রায় একই সময় একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহৃত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়। নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ৪ মে র‌্যাবের বিরুদ্ধে  বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, নজরুলসহ অন্যদের র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এজন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে ৬ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লাকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কমিটি ১২ মে থেকে কয়েক দফায় নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসে ও সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেস্ট হাউসে গণশুনানি করে। কমিটি ওই সাতজনের লাশ উদ্ধারের স্থান, নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ও ক্যাম্প অফিস পরিদর্শন করে। ইতোমধ্যে র‌্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক মোহাম্মদ সাঈদ, মেজর (অব.) আরিফুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের তিনজনকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কমিটি। –