Bogra Pic-06 (2)

দৈনিক বার্তা- বগুড়া প্রতিনিধি ঃ বগুড়ায় ৪ সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিঙ্া রেজিষ্ট্রেশন না করায় সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৷ রেজিষ্ট্রেশন বিহীন প্রতিটি সিএনজি মালিককে প্রতিমাসে রৰাকবজ হিসেবে গুনতে হচ্ছে ৪ শ’ থেকে ৫ ‘শ টাকা ৷ অতিরিক্ত যানজটের  কারনে বগুড়ায় সিএনজি বিক্রয় ও রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ থাকলেও তা প্রতিনিয়ত বিক্রয় হচ্ছে৷ এ ঘটনায় বগুড়া বিআরটিএ’র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে৷ সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানাগেছে বগুড়া জেলার ১২ টি উপজেলায় ৭ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিঙ্া চলাচল করছে ৷ এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ১ ‘শ ৬০ টির রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে ৷ বাঁকী প্রায় ৪ হাজার সিএনজি রেজিষ্ট্রেশন বিহীন অবস্থায় চলাচল করলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ এবং  পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার ৷ বগুড়ায় অতিরিক্ত যানজটের কারণে বিগত ২০১১ সালে বিআরটিএ’র রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি বগুড়ায় সিএনজি বিক্রয় ও রেজিষ্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়৷ সেই সিদ্ধানত্মের কথা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয় সিএনজি আমদানীকারক উত্তরা মোটরর্স কে৷  সেই থেকে উত্তরা মোটরর্স বগুড়ায় সিএনজি বিপনন বন্ধ করে দেয় ৷ তবে উত্তরা মোটরর্স বগুড়ার ম্যানেজার/ ব্রাঞ্চ ইনচার্জ মিঃ আবেদ সেই চিঠির তারিখ বা স্মারক নং কোনটাই বলতে পারেননি৷ এর পর বিআরটিএ বগুড়ায় ২০১২ সালে ৯ টি ২০১৩ সালে ১ টি ও ২০১৪ সালের  জুন মাস পর্যনত্ম ১’শ ৪৯ টি সিএনজির রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে৷আর এসব রেজিষ্ট্রেশন পাওয়া সিএনজি বগুড়ার একটি এনজিওর মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়েছে৷ এদিকে বগুড়ার চাহিদার প্রতি লৰ্য রেখে সিএনজি ব্যবসায়ীগণ আশপাশের জেলাগুলোর ঠিকানায় সিএনজি ক্রয় করে এনে  বগুড়ায় চালাতে থাকে ৷ বর্তমানে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪ হাজার ৷

বগুড়ায় ৮টি মালিক সংগঠনের মাধ্যমে চলাচল করছে এসব সিএনজি৷ রেজিষ্ট্রেশন বিহীন চলাচলে প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে সিএনজি মালিকগণ একটি গোপন আপোষের মাধ্যমে প্রশাসনের  সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে৷ এ জন্য প্রতিমাসে সিএনজি প্রতি ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা বখরা দিয়ে যাচ্ছে ৪ হাজার রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি মালিকরা৷ সেই হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে৷ আর পুরো টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন  সত্মরে এবং বগুড়ার প্রভাবশালী মহলের পকেটে৷ তবে বখরা দেয়ার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিএনজি মালিক জানান৷ এসব সুবিধার মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন বাবদ এককালীন এবং প্রতি বছর রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন বাবদ টাকা সাশ্রয়, ড্রাইভিং লাইসেন্স  বিহীন দ্বিধা-দ্বন্দ ছাড়াই তারা চলাচল করতে পারছে৷ এছাড়া প্রতি বছর রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন করতে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না৷ সিএনজি চালকদের শতকরা ৯০ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই৷ প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় তারা মালিক সমিতির বেধে দেয়া ভাড়া নিয়ে  থাকে ৷ রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছেন বগুড়া পুলিশ প্রশাসনের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত একজন ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট, যিনি সম্প্রতি বগুড়ার পাশের জেলা থেকে বদলী হয়ে এসেছেন৷

প্রতিটি সিএনজি রেজিষ্ট্রেশন করতে বিআরটিএ’তে জমা দিতে হয় ১৩ হাজার ৫’শ ৪৩ টাকা এবং প্রতি বছর নবায়ন করতে ৬ হাজার ৭’শ ৮৪ টাকা আর প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ ১ হাজার ৬’শ টাকা ৷ সেই হিসেবে গত ৩ বছরে ৪ হাজার সিএনজি রেজিষ্ট্রেশন না করায়  সরকার ১২ কোটির বেশি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলহাজ শেখ বলেন, বগুড়া বিআরটিএ প্রকৃত সিএনজি মালিকদের রেজিষ্ট্রেশন না দিয়ে টিএমএসএস নামের এনজিওর মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রয় করা  সিএনজির রেজিষ্ট্রেশন দেয়া অব্যাহত রেখেছে৷ এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীগন ৰতিগ্রস্থ হচ্ছে৷ রেজিষ্ট্রেশন না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশ প্রশাসন প্রতি রাতে বিনা ভাড়ায় সিএনজি মালিক সমিতিগুলো থেকে প্রায় ২০ টি সিএনজি রাত্রীকালীন ডিউটিতে নিয়ে যাচ্ছে৷ এতে সিএনজি চালক ও  মালিক উভয়ই ৰতির মুখে পড়ছে৷ পূর্ব বগুড়া সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিথুন বলেন আমাদের মালিক সমিতিতে অনেক শিৰিত বেকার যুবক সম্পদ বিক্রি করে ,অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজিবী তাদের পেনশনের টাকা দিয়ে সিএনজি ব্যবসা করছেন ৷আর তাদের কে  রেজিষ্ট্রেশন না দিয়ে প্রশাসন বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন ৷ সিএনজিগুলো চালু থাকায় প্রচুর বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ অনত্মত বেকারদের কথা চিনত্মা করে এসব সিএনজির রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান৷ তিনি আরও বলেন যেহেতু সিএনজি  পরিবহনের আওতায় পড়ে আর এ কারণে বিআরটিএর কমিটিতে সিএনজির প্রতিনিধিত্ব রাখা উচিত্‍৷  এ ব্যাপারে বগুড়া ট্রাফিক পুলিশ ইন্সপেক্টর মোঃ খলিলুর রহমান রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সিএনজি থেকে টাকা আদায়ের বিষয় অস্বীকার করে বলেন কে বা কারা টাকা আদায় করছে তা আমাদের জানা নেই ৷ তবে রাত্রীকালীন পুলিশের পাহারার কথা স্বীকার করে বলেন রাত্রীকালীন ডিউটিতে  বগুড়া পুলিশের গাড়ী অপ্রতুল থাকায় প্রায় ২০ টি সিএনজি গ্যাসের মূল্য পরিশোধ সাপেৰে সিএনজি আমরা নিয়ে থাকি৷ জনগণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাদেরকে এ কাজ করতে হচ্ছে৷ বিআরটিএ বগুড়ার সহকারি পরিচালক ও রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির সদস্য সচিব  জিয়াউর রহমান বলেন,বগুড়া জেলা প্রশাসককে সভাপতি বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালককে সদস্য সচিব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,বাস মালিক সমিতির সভাপতি,ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি,মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি,সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ ১১ সদস্য  বিশিষ্ট রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ আর যাবতীয় সিদ্ধানত্ম উক্ত কমিটি গ্রহন করে থাকে৷ এখানে একক ভাবে যে কেউ ইচ্ছা করলেই কোন প্রকার সিদ্ধানত্ম গ্রহন করতে পারে না৷ আর তাই এ যাবত্‍ যতগুলো সিদ্ধানত্ম গ্রহন করা হয়েছে তা উক্ত কমিটিই করেছে৷

তবে বগুড়ায় সিএনজি চালকদের ডা্রইভিং লাইসেন্স খুবই সীমিত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন , খুব শীঘ্র সিএনজি চালকদের লাইসেন্স এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷