aug-21-attack
দৈনিকবার্তা- ঢাকা,১৬আগষ্ট : রোববার স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গীদের নারকীয় সিরিজ বোমা হামলার কলংকময় দিন৷২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট এদিনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি দেশের ৬২টি জেলায় সাড়ে ৪শ’ স্পটে একযোগে প্রায় ৫শ’ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷এর পর থেকে কয়েক মাসে জঙ্গীদের ধারাবাহিক নারকীয় বোমা হামলায় বিচারক আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন প্রাণ হারান৷ আহত হন ৪ শতাধিক৷

জঙ্গীরা বিভিন্ন সময়ে দেশের আদালত প্রাঙ্গণ, বিমান বন্দর, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সংশিস্নষ্ট এলাকায় সাড়ে চার শতাধিক পয়েন্টে একযোগে বোমা হামলা চালায়৷ বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে সারাদেশ৷ রাজধানীর ৩৪টি পয়েন্টে ও জেলা শহরগুলোতে বারম্নদের গন্ধে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়৷ বোমা হামলার পরপরেই বিভিন্ন স্পটে এবং বোমা বিস্ফোরিত স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হয় জেএমবি’র লিফলেট৷

এই হামলার ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি আদালতে আত্মঘাতি বোমা হামলায় বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল রহমান নিহত হন৷ ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এই বোমা হামলায় ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন৷ ২৯ নভেম্বর গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আবারও বোমা হামলায় ১১ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন৷ একই দিন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে এক আত্মঘাতি, জঙ্গি ও দুই পুলিশ নিহত হন৷ ১ ডিসেম্বর গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে আবারো বোমা হামলায় নিহত হন ১ জন, আহত হন ৫ জন৷

২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলায় কর্মরত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু সুফিয়ান জেএমবির বই বোমা হামলার শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে যান৷ বর্তমানে তিনি অন্য একটি জেলার জেলা জজের দায়িত্ব পালন করছেন৷ সেদিন এজলাস চলার সময় একজন সাক্ষী কাঠগড়ায় উঠার পূর্ব মুহূর্তে জেএমবির’ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে বই বোমা ছুঁড়ে মারে৷ সেই দিনের এই হামলা সম্পর্কে আবু সুফিয়ান বলেন, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর সেই সময়ের সরকারের অবহেলা ও গোয়েন্দা বিভাগের অযোগ্যতার কারণে হামলাকারীরা দ্বিতীয় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহারকারী বিপদগামী জঙ্গিরা বিচারক হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের কথিত তাগুদি আইনের ধোঁয়া তুলে প্রকাশ্যে বিচারকের লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়ে মারে, তখন মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ার কারণে ইসলাম নাম ব্যবহারকারীর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন, তাদের পথ সঠিক নয়৷ তিনি বলেন, এ ঘটনার পর সরকার কিংবা বিচার বিভাগ তাকে কোন সহানুভূতি কিংবা সহযোগিতা করেনি৷ কোন নিরাপত্তাও দেয়া হয়নি, যা ছিল হতাশাজনক৷র্যাবের মিডিয়া পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, ২০০৫ সালের সারাদেশে সিরিজ বোমা হামরার ঘটনায় জেএমবির ৬৭০জন সদস্যকে আসামী করে মোট ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়৷এর মধ্যে ১০২টি মামলার রায় ঘোষনা করা হয়েছে৷

এতে ২৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যার মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়৷ ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ এই রায় প্রদান করা হলে শাইখ আবদুর রহমান এবং বাংলা ভাইসহ ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়৷ বোমা হামলার অভিযোগে শায়েখ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ জেএমবি’র ৬ শীর্ষ নেতার মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়েছে৷২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৮ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য জড়িত থাকার কথা বলা হলেও জঙ্গিদের সহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছিলেন বিএনপি নেতারা৷

এছাড়াও জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বোমা হামলার আগে জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি’র নেতা বাংলা ভাই এবং শায়েখ আবদুর রহমানকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উলেস্নখ করেছিলেন৷ দিবসের কর্মসুচি : দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বিকাল ৪ টায় বঙ্গবন্ধুএ্যাভিনিউতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে৷ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য রাখবেন৷