37365_eduদৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৯ আগষ্ট: সসনদ দাখিল করেননি। তবুও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষক ও এক কর্মকর্তা। এ নিয়ে সিন্ডিকেটে দফায় দফায় হট্টগোল হলেও আমলে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দলীয় বিবেচনায় তাদের এই সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হয়েছে সরকারি আইনও। অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল বারাক আলভী, আইবিএ’র পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল আহমেদ এবং কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া। এদের মধ্যে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে চিঠি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। সূত্র জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চাকরির বয়সসীমা গত ৩০শে জুন শেষ হয়। মুক্তিযোদ্ধা হলে চাকরির বৈধ বয়স সীমা শেষ হওয়ার পর আরও এক বছর বাড়তি চাকরি করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ সুবিধা ভোগ করার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তারা আবেদন করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারা কোন বৈধ কাগজপত্র প্রশাসনকে দেখাতে পারেননি। সূত্র জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান এমফিল করার জন্য ১৯৭০ সালে ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ১৯৭১ সালের ৬ই অক্টোবর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সে সময় নিজেকে কোথাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ড. আজিজুর রহমান প্রথমে এই প্রতিবেদককে দেখা করতে বলেন। সাক্ষাতের সময় চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
ড. গিয়াস উদ্দিন মোল্ল¬া এক বছর আগে অবসরে (এলপিআর) যান। সে সময় তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু আরও প্রায় এক বছর ওই দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকলেও তিনি পদটি ছেড়ে দেন। পরে তিনি এ বছর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা নেয়ার জন্য আবেদন করেন। তবে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। অন্য অভিযুক্তদের মধ্যেও কেউ নিজেকে এর আগে মুক্তিযোদ্ধা বলে উল্লেখ করেননি। ২০১০ সালের ৭ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়- যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, মুক্তিবার্তা পত্রিকা ও গেজেটে যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে, যারা প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরযুক্ত সনদ গ্রহণ করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারী বলে বিবেচিত হবেন। সরকারের আদেশকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে অভিযুক্তরা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার মধ্যে পড়েন না। তারপরও ২২শে জুনের সিন্ডিকেট সভায় দলীয় বিবেচনায় তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াত সর্মথিত সাদা দলের সদস্যরা নোট অব ডিসেন্ট দেন। ব্যাপক বাকবিত-ার পর আবেদনকারীদের মুক্তিযোদ্ধার বৈধ সনদ দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু সনদ দেখানোর আগেই গত ২৫শে জুন অভিযুক্ত চার শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তাকে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিগুলোতে এই মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। চিঠিতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখানোর শর্তে চাকরির মেয়াদ দুই বছর বর্ধিত করা হলো। এখানেও আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে। ২০১২ সালের ৬ই ডিসেম্বর The public Servents (retirment) Act, 1974 (Act No. X11 of 1974) এ ধারা সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীগণের বাড়তি চাকরির মেয়াদ দুই বছর থেকে এক বছর করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসকল সংস্থা বিশেষ কোন আইনের বিধানবলে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে থাকেন, আইনের সমতার নীতি অনুযায়ী তারাও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে বাধ্য। এতে আরও বলা হয়, চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়টি আপাতদৃষ্টে একটি সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে হলেও এ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাটি আবশ্যিকভাবে তাদের জন্য পালনীয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র থেকে জানা যায়, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ পূর্বের ন্যায় দুই বছর বাড়িয়ে থাকেন। যা আইনের লঙ্ঘন। এ বিষয়ে গত ৪ঠা আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোন কোন সংস্থা মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীগণকে এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর বর্ধিত সময়কাল চাকরির সুযোগ প্রদান করছে যা সরকারের বিঘোষিত মৌলিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বেশ কয়েকদিন সনদ দেয়া বন্ধ থাকায় ওই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে অতিদ্রুত তাদের কাছে সনদ চাওয়া হবে। এটা আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। চাকরির মেয়াদ এক বছরের স্থলে দুই বছর কেন বাড়ানো হয়েছে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে যেভাবে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিই। তিনি বলেন, মঞ্জুরি কমিশনের চিঠিতে দুই বছর বাড়ানোর কথা উল্লেখ ছিল। এদিকে এই প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ১০ই আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দেননি, তারা কোন সুবিধা নিয়ে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। আর যারা ভুল তথ্য দিয়ে চাকরির শেষ সময় এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে এক বছর বাড়তি চাকরি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া হবে।