Muhit

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর: রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সম্পর্কিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা বলেন৷
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৃহস্পতিবার শ্রীলংকায় ৫০ হাজার টন চাল রফতানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়৷

অর্থমন্ত্রী বলেন, এর আগে ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালনা পর্ষদে সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারা ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তাই আমরা সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবেক ব্যাংকারদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি৷ এখন থেকে পেশাগতভাবে দক্ষ লোকদের এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান৷

উল্লেখ, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে অর্থনীতিবীদ আবুল বারাকাত পুন: নিয়োগ পেতে মন্ত্রীর সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন৷ বুধবার সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরীকে জনতা ব্যাংকের নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ সমপ্রতি রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে জনতা ব্যাংকের বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে আয়োজিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় টাকা চেয়ে জনতা ব্যাংককে একটি চিঠি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী৷ ওই টাকা না দেওয়ায় জনতাসহ চারটি ব্যাংকের সিএসআর (সামাজিক দায়বদ্ধতা) কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে৷ আর এর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বোকামি করেছেন৷ তিনি নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন৷

এর জবারে গত পাঁচ বছরে জনতা ব্যাংকের অনেক অবক্ষয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ আর এর দায়দায়িত্ব ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷আবুল বারাকাতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন৷মন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসি তখন এটি সরকারের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ছিল৷ বর্তমানে তাদের প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী৷

জনতা ব্যাংকের কার্যক্রম তদন্ত করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের কার্যক্রম নিয়ে কোনো তদন্ত করার প্রয়োজন বোধ করছি না৷নৌকা বাইচের টাকা না দেওয়ার কারণে জনতা ব্যাংকের সিএসআর ফান্ড বন্ধ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ করেন আবুল বারাকাত৷এর সত্যতা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংবাদ মাধ্যমে আমি এটা জেনেছি৷ এ নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই৷

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তা আর বাড়ানো হবে না৷ সেজন্য তার দুঃখ থাকলেও থাকতে পারে৷ আমার মনে হয় আমরা গত সরকারের ৫ বছরে তাকে দেখেছি৷ দেশে আওয়ামী লীগের সমর্থক লোক বহু আছেন৷ তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন গুরুত্বপূর্ণ৷ তাদেরকেও আমাদের দেখাশুনা করতে হয়৷ একজন চেয়ারম্যান অনন্তকালের জন্য বোর্ডে থাকবেন তা মনে করার কারণ নেই৷তার জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এক হাত নেন জনতা ব্যাংকের বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. আবুল বারাকাত৷

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ড. আবুল বারাকাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আদেশ-নির্দেশ মেনেই আমি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি৷ পাঁচ বছর আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রাখার উনি (অর্থমন্ত্রী)কে ?এ সময় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আবুল বারাকাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দুর্দিনে ছিলেন তখন উনি (অর্থমন্ত্রী) বুড়িগঙ্গা নিয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন করেন৷ এ আদর্শ নিয়েই অর্থমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেন৷

তিনি আরো বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আপনি জনতা ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হেনস্থা করবেন না৷ তাহলে আমি আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো৷

এদিকে, বৃহস্পতিবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়৷বৈঠকে শ্রীলংকায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল রপ্তানির প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার৷ বাংলাদেশ প্রতি বছর স্বল্প পরিমাণে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করলেও বড় পরিসরে সিদ্ধ চাল রপ্তানি এই প্রথম৷

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, দেশে বর্তমানে ১১ লাখ মেট্রিক টন চালের মজুদ আছে৷ শ্রীলঙ্কা বন্ধুপ্রতিম দেশ৷ আমরা টেস্ট কেইস হিসাবে এটা নিলাম৷ আন্তর্জাতিক বাজারের দর মাথায় রেখে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে এই ৫০ হাজার মেট্রিক টন চালের দাম ঠিক করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান৷পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এই রপ্তানির ফলে দেশে চালের কোনো সংকট তৈরি হবে না জানিয়ে মুহিত বলেন, আরো মজুদ থাকলে পরে অন্য দেশে বিক্রির বিষয়ে ভাবা হবে৷

অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী,বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এই বৈঠকে অংশ নেন৷বাংলাদেশ চলতি বছর শ্রীলংকায় ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টন চাল রপ্তানি করবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷

বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাই কমিশন সমপ্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জি টু জি পর্যায়ে (সরকার থেকে সরকার) সিদ্ধ চাল আমদানির এই প্রস্তাব দেয়৷ কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে চাল আমদানি করতে চায় দেশটি৷খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অগাস্ট পর্যন্ত সরকারি ভাণ্ডারে ১১ লাখ মেট্রিক টন চালের মজুদ ছিল, যা গত বছরের ওই সময় থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন বেশি৷বাংলাদেশে চালের উত্‍পাদন ও সরকারি গুদামে মজুদ পর্যালোচনা করে খাদ্য অধিদপ্তর ৫০ হাজার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছিল৷