Gauranadi

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী,২৮অক্টোবর: তেরো গ্রামের হিন্দু, মুসলমান ও খ্রীষ্টসমপ্রদায়ের লক্ষাধিক নিরিহ জনসাধারন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী নান্নু বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পরেছেন৷ সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় অতিসমপ্রতি ওই বাহিনীর প্রধান নান্নু মৃধা ও তার সহযোগীরা কুপিয়ে খাদেম সরদার নামের এক মুসুল্লীকে খুন ও তার পুত্র আসলাম সরদারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে৷ এ ঘটনার পর ওইসব গ্রামের নিরিহ বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করলেও নির্যাতিতরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন৷

সন্ত্রাসী নান্নু ও তার বাহিনীর সদস্যদের জুলুম, অত্যাচার, শারিরিক ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের চারটি পরিবারের সদস্যরা৷ ভূক্তভোগী গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে “গ্রাম পরিচালনা কমিটি” গঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী মোকাবেলায় এখন রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন৷ এনিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নে৷

বিশেষ অনুসন্ধান ও সরেজমিনে বার্থী ইউনিয়নের মাদকের স্বর্গরাজ্য বলেখ্যাত রাজাপুর, নন্দনপট্টি, বেজগাতি, উত্তর ধানডোবা, গোরক্ষডোবা, দক্ষিণ ধানডোবা, উত্তর মাদ্রা, বাঙ্গিলা, দক্ষিণ মাদ্রা, ধুরিয়াইল, সাজুরিয়া, চেঙ্গুটিয়া ও রামসিদ্ধি গ্রামঘুরে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের সাথে আলাপকরে জানা গেছে, সন্ত্রাসী নান্নু বাহিনীর ভয়ঙ্করসব অজানা কাহিনী৷ সূত্রমতে, নন্দনপট্টি গ্রামের মৃত সফিউদ্দিন মৃধার বড়পুত্র পান্নু মৃধা ১৯৯৬ সালে বার্থী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তার সহদর নান্নু মৃধা ও সেন্টু মৃধা৷ ফলে খুব সহজেই গৌরনদীর শীর্ষ সন্ত্রাসী বার্থীর হাবুল প্যাদার সন্ত্রাসী গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পান নান্নু মৃধা৷ বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে হাবুল প্যাদা নিহত হওয়ার পর তার অস্ত্রভান্ডার নান্নুর কাছেই অক্ষত থেকে যায়৷ পরবর্তীতে নান্নু তার নিজ নামে ‘নান্নু বাহিনী’ নামের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেন৷ ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করেন নান্নুর সহদর সেন্টু মৃধা ও কটকস্থল গ্রামের হারুন সিকদারের পুত্র আল-মাদানী সিকদার৷

এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ২০১১ সালে নান্নু মৃধা নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাবে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন৷ এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে ও তার বাহিনীর সদস্যদের৷ বরিশাল জেলার উত্তর জনপদে মাদক সরবরাহের একক আধিপত্য বিস্তার করেন নান্নু বাহিনী৷ প্রতিনিয়ত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিভিন্ন কৌশলে মাদকের বড় বড় চালান আসতে থাকে বাহিনীর প্রধান নান্নুর কাছে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার বিপুল পরিমান মাদকসহ নান্নু ও তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড সেন্টু মৃধা এবং আল-মাদানী সিকদারকে গ্রেপ্তার করেন৷ কয়েকদিন পর আইনের ফাঁক ফোকর পেরিয়ে তারা জামিনে বেরিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন৷ নিজ গ্রামসহ পাশ্ববর্তী ১২টি গ্রামে মাদকের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিয়ে একক আধিপত্যের জন্য সন্ত্রাসী ওই বাহিনীর প্রধান ও তার সহযোগীরা পুরো ১৩টি গ্রামকে জিম্মি করে রাখেন৷ সন্ত্রাসী নান্নু ও তার বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীকে জিম্মি করে শুরু করেন জমিদখল, জুলুমবাজি, অত্যাচার, শারিরিক ও পাশবিক নির্যাতন৷

এজন্য তারা গোরক্ষডোবা গ্রামের জনৈক সিদ্দিক সন্যামাতের নির্মানাধীন পরিত্যক্ত বিল্ডিং দখল করে সেটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেন৷ ওই সেল থেকেই বিভিন্নস্থানে মাদক সরবরাহ ও নারীদের ইজ্জত হরণ করা হতো৷ গ্রামবাসী সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে ওই সেলে বসেই তাদের শারিরিক নির্যাতন করা হতো৷স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী নান্নু ও তার বাহিনীর বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভয়ে কখনো কেহ মুখ খুলতে সাহস পায়নি৷

সূত্রে আরো জানা গেছে, নান্নু ও তার আরেক সহযোগী নিত্যানন্দ মন্ডলসহ অন্যান্যরা গোরক্ষডোবা এলাকার প্রায় চার’শ একর জমিতে জোরপূর্বক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন৷ এতে জমির প্রকৃত মালিকরা বাঁধা প্রদান করায় সন্ত্রাসী নান্নু ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সময় খ্রীষ্টসমপ্রদায়ের সাইমুন হালদার, জ্যাকব হালদার, বাকপ্রতিবন্ধী রিপন হালদার, হিন্দু সমপ্রদায়ের গৌরাঙ্গ বালা, কালাচাঁদ বালা, মুসলীম সমপ্রদায়ের হারুন হাওলাদার, রিজিয়া বেগম, ছালাম সেরনিয়াবাত, আফজাল চৌকিদার, মাওলা চৌকিদার, মোকলেচ মৃধাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে৷ এছাড়া বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় আরো প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে টর্চার সেলে নিয়ে মারধর করা হয়৷ ওই সন্ত্রাসীদের জুলুম, অত্যাচার, বাড়ির গৃহবধূ ও যুবতী মেয়েদের পাশবিক নির্যাতন কিংবা হুমকির মুখে ইতোমধ্যে স্ব-পরিবারে দেশত্যাগ করেছেন সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের গৌর বালা, কৃষ্ণ দাস, চিত্ত দাস ও নারায়ন দাস৷

নন্দনপট্টি গ্রামের শাহেআলম সরদার অভিযোগ করেন, গত এক বছর পূর্বে থানা পুলিশ বেজগাতি গ্রাম থেকে নান্নু মৃধার ৯’শ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন৷ ওইসময় পুলিশ স্বাক্ষী হিসেবে তার নাম অন্তভূক্তি করায় সমপ্রতিসময়ে সে আদালতে নান্নু মৃধার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন৷ এছাড়া অতিসমপ্রতি যশোর থেকে নান্নু মৃধার কাছে মাদকের চালান নিয়ে আসা এক মাদক সরবরাহকারীকে তিনিসহ এলাকাবাসী আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেন৷ তিনি আরো জানান, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করার জন্য তার পিতা খাদেম সরদার (৬০) অন্যান্য মুসুল্লীদের নিয়ে স্থানীয় সরদার বাড়ি আক্ছা জামে মসজিদে বসে একাধিকবার বৈঠক করেন৷

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী নান্নু মৃধা, ও তার সহযোগী সেন্টু মৃধা, আল-মাদানী সিকদার, কবির ওরফে কালা কবির, জাফর, ওয়াসিম প্যাদা, পান্নু মৃধা, আবুল কালাম, সবুজ মৃধা, ফানজু মৃধা, শিমুল সরদারসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসীরা গত ১৩ অক্টোবর এশার নামাজ শেষে