image_107193_0

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ নভেম্বর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরবিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বাকশাল করা৷ একই ভুল করতে চলেছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা৷ ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ঐক্য গঠন না করে বাকশাল কায়েম করেছিলেন৷ তার মতো একই ভুল করছেন তারই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন৷ ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানীর মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানীর আদর্শ অনুসরনে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)৷

বিএনপির নেতা ফখরুল আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, যে দল অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, বেশির ভাগ মানুষের সমর্থনও পেয়েছে, সে দলটি তাঁবেদার দলে পরিণত হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ একটি তাঁবেদার দল বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারা দেশে এমনকি গ্রামেগঞ্জে পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, যখন বিজয় প্রায় সুনিশ্চিত, তখন ষড়যন্ত্র করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে৷

জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের ওপর দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আছে৷ তাই কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও মানুষের সাড়া পায়নি৷ এর জবাবে বিএনপির নেতা ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে যে বিএনপির সঙ্গে জনগণ আছে না নেই৷

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারা দেশে এমনকি গ্রামেগঞ্জে পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, যখন বিজয় প্রায় সুনিশ্চিত, তখন ষড়যন্ত্র করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে৷ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের ৪২টি দলের মধ্যে ৩০টি দলই অংশ নেয়নি৷ তারা খুন,গুম ও ভয় দেখিয়ে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন৷ তবে হাস্যকর হলেও সত্য অনেক বিজয়ী প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকার জনগণ চিনেন না৷আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, যে দল অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, বেশির ভাগ মানুষের সমর্থনও পেয়েছে, সে দলটি তাঁবেদার দলে পরিণত হয়েছে৷

সভায় ভারপ্রাপ্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ অর্থনীতিসহ গোটা দেশকে ধ্বংস করেছে৷ গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে৷ তাই আন্দোলন নয়, সরকারকে হটাতে সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার যতই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র, মানুষ হত্যা, হামলা-মামলা করুক না কেন জনগণের দাবি দমিয়ে রাখাতে পারবে না৷ মাথা নত না করা ও জনগণের রাজনীতি ধারণ করায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন দাবি করেন মির্জা ফখরুল৷ তিনি অভিযোগ করেন, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে৷মির্জা ফখরুল সরকারকে সতর্ক করে দেন, নেতাকর্মীদের নামে মামলা আর তাদের গ্রেফতার ও কারাগারে নিক্ষেপ করে আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না৷ অতীতেও কেউ পারেনি, এই সরকারও পারবে না৷

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, জয় প্রতি মাস এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন নিতেন৷ এখন সত্য কথা বলার জন্য তার চাকরি গেল, নাকি অন্য কারণে, আমরা বুঝতে পারছি না৷ এ বিষয়ে আমরা এখনো পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাইনি৷আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের সামপ্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে৷ এইচ টি ইমাম সরকারের কারিকুরি ফাঁস করে দিয়েছেন৷ তার নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ফল পাল্টে দিয়েছিল৷ সংবাদ সম্মেলনে তিনি (এইচ টি ইমাম) অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু জনগণ তা বিশ্বাস করেনি৷

জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু না বললে কেউ বাংলাদেশে থাকতে পারবে না- একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, এই ধরনের ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী কথা আগেও আমরা শুনেছি৷ আমরা দেখেছি সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করে বলা হয়েছিল কোথায় সিরাজ শিকদার৷ এরপর কী হলো- কোথায় আওয়ামী লীগ, কোথায় তাদের নেতা৷ ফখরুল বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পতাকাকে আটকে ধরেছেন বলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল৷ কারণ তারেক রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বেঁচে থাকবে৷ এটা পরাধীনতার রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা কোনভাবে মেনে নিতে পারে না

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কোনো ‘ষড়যন্ত্র সফল হবে না এবং তা মেনেও নেওয়া হবে না বলে সতর্ক করে দেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ ফখরুল বলেন, বাংলাদশকে পদানত ও আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে নতি স্বীকারের জন্য ১/১১ এর সময়ে তারেককে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল৷ কিন্তু তাকে নিয়ে যতই ষড়যন্ত্র হোক, যতোই মামলা দেওয়া হোক, ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না৷ এদেশের জনগণ কোনো দিন এ চক্রান্ত মেনে নেবে না৷

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হত্যার মধ্যে দিয়ে এদেশে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তারা ভেবেছিল দেশকে ধ্বংস করা যাবে৷ কিন্তু তারপর খালেদা জিয়ার আগমনে গণতন্ত্র আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে স্বৈরাচারী’ মন্তব্য করে ফখরুল দাবি করেন, গত এক বছরে এ সরকার ৩১০ জনকে হত্যা এবং ৬৫ জনকে গুম করেছে৷ আমরা এই শহীদ ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চাই৷ তিনি বলেন, এ অবৈধ মানুষ হত্যাকারী হাসিনা সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷ সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষায় খালেদা জিয়ার আহ্বানে সকলকে এগিয়ে এসে এ দখলবাজ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে রুখতে হবে৷

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ১৬ কোটি মানুষের আশা আকাক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্বের পতাকা ধরেছেন তারেক রহমান৷ তার পিতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন৷ তার মা খালেদা জিয়ার হাত ধরে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ তাই ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছে তাদের পুত্র তারেক রহমান গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা ধরবেন, সেজন্যই ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল৷ তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো একটি মীমাংসিত বিষয়৷ কিন্তু তারা এ প্রথাকে বাদিল করে জোর করে ক্ষমতায় বসেছে৷ তারা মনে করছেন এ দেশ তাদের পৈতিক সম্পত্তি৷ কিন্তু না এ দেশে জনগণের৷ জনগণ যাকে খুশি তাকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন৷ তারাই দেশের সকল ক্ষমতার উত্‍স৷ফখরুল বলেন, মওলানা ভাসানী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গিয়েছেন৷ তিনি জনগণকে ভালোবাসতেন৷ তিনি কখনো ক্ষমতায় বসার জন্য আন্দোলন করেননি৷

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি\’র (এনপিপি) সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ৷