ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁর সরকার পেশাদার ও সুপ্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, এ জন্য আমরা জাতীয় বাজেটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছি এবং সশস্ত্র বাহিনী গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি৷তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আপনাদের মেধা, শ্রম এবং প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান দিয়ে আপনারা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন অনেক বেশি প্রস্তুত৷ একটি উন্নততর ও পরসপরের সাথে সমপৃক্ত বিশ্বে বসবাস করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই বিশ্বও বিভিন্ন কারণে সুরক্ষিত নয়৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের নিয়ম-নীতি প্রভাব ফেলে৷ যার ফলে উন্নত দেশের অনেক অভিঘাতের প্রতিই থাকে তারা অরক্ষিত৷বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং আমর্ড ফোর্স ওয়ার (এএফডবি্লউ) কোর্স-২০১৪ এর গ্রাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন৷অনুষ্ঠানে এনডিসির কমান্ডান্ট লে. জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবরও বক্তব্য রাখেন৷ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, কূটনৈতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷ শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী তার প্রচেষ্টা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান অব্যাহত বজায় রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সৃষ্ট সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্ববোধ করে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা বাহিনী জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সবসময়ে তাদের পাশে রয়েছে৷ ভবিষ্যতেও তারা জনগণের পাশে থাকবে বলে তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন৷ শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্য অর্জনে চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাঙ্ক এমবিটি-২০০০, সেলফপ্রোপেলড গান, রাডার, সেনা বাহিনীর জন্য এপিসি এবং সামরিক বিমান বাহিনীর জন্য আধুনিক হেলিকপ্টারসহ আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ বাহিনীর জন্য সাবমেরিন ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ ২০১৬ সালের মধ্যে এই সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হেলিকপ্টার, মেরিন পেট্টোল এয়ারক্রাপ্ট, মর্ডান ফ্রিগেট ও জাহাজ কেনা হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বশেষ প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করেছে৷ শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে৷তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অখন্ডতা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে এবং যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক ও অন্য কোন দুর্যোগের সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে৷ শেখ হাসিনা বলেন, তারা কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দেশে ও দেশের বাইরে খুবই মানসম্পন্ন কাজ করছে৷ তারা দেশে ও বিদেশে ভাল কাজ করে সুনাম বয়ে আনছে৷ তিনি জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেকার এই অংশীদারিত্ব আগামীতে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল েেদশগুলোর অর্থনীতি বহুমুখীকরণ ও জোরদারে এ সকল দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান৷ শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অধিক সম্ভাবনাময় ও কানেকটেক্ট ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি৷ এ জন্য আমরা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছি৷ উন্নয়নশীল দেশগুলো আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রণীত নীতির মধ্যে চলছে৷ ফলে উন্নত দেশগুলো এ সকল দেশ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে৷তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই অর্থনীতি বহুমুখিকরণ ও শক্তিশালীকরণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে৷ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স ২০১৪ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স ২০১৪-এর সনদ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম৷ শুরু থেকেই আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের আশা-আকাক্ষা পূরণে সর্বদা তাদের পাশে থেকেছেন৷ আমি আশা করছি ভবিষ্যতেও সশস্ত্র বাহিনীর এই ভূমিকা অটুট থাকবে৷একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় বাজেটে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আমরা বর্ধিত হারে অর্থ বরাদ্দ করে যাচ্ছি৷ সফলতার সঙ্গে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স সম্পন্ন করা ৭৭ জন বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সনদ গ্রহণ করেন৷বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৮ জন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, নৌ বাহিনীর ৪ জন কমোডর, বিমান বাহিনীর ৩ জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন, সিভিল সার্ভিসের ১১ জন, পুলিশের একজন ডিআইজি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডিজি এবং ভারত, পাকিস্তান, চীন, মিশর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, কুয়েত, জর্দান ও সৌদি আরবের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ২৮ জন কর্মকর্তা এবারের এনডিসি কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন৷ অন্যদিকে এ বছর আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে (এএফডবি্লউসি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর দুই জন ক্যাপ্টেন ও তিন জন কমান্ডার এবং বিমান বাহিনীর দুই জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও তিন জন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন৷প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই এক বছরের এনডিসি ও এএফডবি্লউ কোর্স শেষ করায় প্রশিক্ষণার্থীদের অভিনন্দন জানান৷সনদপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমেই ব্যক্তি এবং দলগত উত্‍কর্ষ অর্জন সম্ভব৷ এই পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমপর্ক জোরদার করা আবশ্যক৷দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমপর্ক প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা৷একটি সমন্বিত আঞ্চলিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমি আনন্দিত যে, আমরা সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের সূচনা প্রত্যক্ষ করছি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা একটি বহুমাত্রিক বিশ্বে বসবাস করছি, যেখানে সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি পরস্পরের সংযোগকে বৃদ্ধি করছে৷ উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে৷ আবার মাঝে মাঝে প্রতিকূল পরিবেশও তৈরি করছে৷ পরিবর্তনশীল পরিবেশে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার উত্‍সাহিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা৷সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে নৌ-বাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজন করা হবে৷ ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করতে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাত্‍পর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷ শেখহাসিনা বলেন, সফলতার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কিছু কিছু আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে৷ এসব চ্যালেজ্ঞ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত হতে হবে৷ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী৷আমি আশা করি, তারা তাদের জ্ঞান, ইচ্ছা ও অঙ্গীকারকে কাজে লাগিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে৷অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর স্বাগত বক্তব্য রাখেন৷মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং এনডিসির ফ্যাকাল্টি সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷পরে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হন এবং কেক কাটেন৷