1390394891_istema bapsদৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ জানুয়ারি: তিন দিন পর টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা৷ হজের পর মুসলমানদের বৃহত্তম সমাবেশ এটি৷আয়োজকরা জানান, ময়দানের সকল প্রস্তুতি বুধবারের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে৷ ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে৷মঙ্গলবার রাতেই মুসলি্লরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করবেন৷দুই পবের্র আয়োজনের প্রথম পর্ব শুরু হবে আগামী শুক্রবার (৯ জানুয়ারি)৷ আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে ১১ই জানুয়ারি৷ দ্বিতীয় পর্ব ১৬ জানুয়ারি শুরু হয়ে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১৮ জানুয়ারি৷

তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে৷ ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন৷তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়ে বেরিয়ে পড়েন৷

প্রতিবছরের মতো এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা, কলকারখানার শ্রমিক-মালিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতির কাজে সহায়তা করছেন৷ সরেজমিনে সোববার দুপুরে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সবাই এখন শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতির ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন৷ প্যান্ডেলের চট সেলাই, চট খুঁটির ওপর টানানো, খুঁটি পোঁতা, মাঠ পরিষ্কার, বিদু্যতের তার সংযোগ, খিত্তার নম্বর লিখার কাজ হচ্ছে৷

মুসুলি্লদের কাতারবদ্ধ হওয়ার জন্যে পুরো মাঠে দাগ কাটা শেষ হলেও খুঁটিতে নম্বর দেওয়া, বিদু্যতের লাইন সংযোগসহ ইজতেমা ময়দানের শেষ পর্যায়ের বিভিন্ন কাজ চলছে৷

ইজতেমার মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা তাবলীগের মুরুব্বী গিয়াস উদ্দিন বলেন, সব কাজ করা হচ্ছে মোশাআরার (পরামর্শ) মাধ্যমে৷ রোববার বিকালের মধ্যে প্রায় ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে৷

তিনি জানান, বাংলাদেশের বাইরে থেকে মুসলি্লদের সংখ্যা এবার বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে৷ গত বছর প্রায় প্রায় ১৭ হাজার বিদেশি মুসলি্ল ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন৷ এবার তা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে৷তাদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ বিদেশি আবাসনের পশ্চিমে তুরাগতীরে তাদের রান্নার চুলা ও রন্ধনশালা নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে৷

মুসুল্লীদের তুরাগ নদী পারাপারের জন্য নদীর ৭টি স্থানে ভাসমান সেতু স্থাপন করার সরঞ্জাম ইতোমধ্যে চলে এসেছে৷ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্রিগেড ওই ব্রিজ স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন করছে৷ প্রয়োজনের সময় মুসলি্লদের জন্য চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে৷

তিতাস গ্যাসের টঙ্গী অঞ্চরের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, তাদের চারজন প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের দল ইজতেমা ময়দানে বিদশি মেহমানদের রন্ধনশালায় গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে৷

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান কাজল জানান, ১১টি উত্‍পাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত ও সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ ওজু- গোসলের হাউজ ও টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে৷এছাড়াও বহুতল পাকা দালানে চার হাজারের বেশি টয়লেট ইউনিট রয়েছে৷ এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত অজু গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে৷ এছাড়া মশক নিধনে ২০টি ফগার মেশিন থাকবে৷

ডেসকোর টঙ্গীর (পূর্ব) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুত্‍ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি রয়েছে৷ উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হবে, যাতে যে কোনো একটি গ্রিড অকেজো হলেও সামগ্রিক বিদু্যত্‍ সরবরাহ বিঘি্নত না হয়৷

ইজতেমা এলাকায় ৪টি জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমার তৈরি রাখা হবে৷ এছাড়া ৫টি অস্থায়ী বিদু্যত্‍ ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে৷ এতে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন৷

জঙ্গি ও ইবোলা ঠেকাতে কড়াকড়ি: জঙ্গি ও ইবোলা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.মোস্তফা কামাল উদ্দিন৷শনিবার দুপুরে তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয় চত্বরে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে এক পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানান৷ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লার রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বিশ্বের ৫টি দেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় ওইসব দেশের মুসলি্লদের বলা হয়েছে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসলে ‘ইবোলা ভাইরাস ফ্রি’ সার্টিফিকেট নিতে হবে৷

বিমানবন্দরগুলোতে অভ্যর্থনা কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ সেখানে অন-এরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সেখানে একটি কমিটি ওই ভিসাগুলো দেবে৷এছাড়া যতগুলো স্থলবন্দর আছে সেখানেও অন-এরাইভাল ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে কমিটি করা হয়েছে৷ সেখানে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভিসা দেবেন৷

যাতে কোনো জঙ্গি বা ইবোলা ভাইরাসবাহী মুসলি্ল ঢুকতে না পারে সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানান সচিব মোস্তফা কামাল৷ তিনি বলেন, বিদেশি মুসলি্লদের সাধারণত ৪৫ দিনের ভিসা দেওয়া হয়৷ আর যারা তিন চিল্লায় আসবেন তাদের দেওয়া হবে ১৩০ দিনের ভিসা৷ তবে এ সবই হবে তাবলীগের মার্কাজের মুরবি্বদের সুপারিশ অনুযায়ী৷

আইনশৃঙ্খলা: ওই সভায় গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে, টহল পুলিশ থাকবে, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, র্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্সও থাকবে৷সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব কন্ট্রোল রুম থাকবে৷ দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হলিপ্যাড থাকবে৷ইজতেমার নিরাপত্তায় ১০ হাজারের মতো পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি জানান৷

মিডিয়া সেন্টারে ফ্রি ওয়াইফাই: পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ একই সভায় জানান, সংবাদ সংগ্রহে আসা সংবাদকর্মীদের জন্য একটি মিডিয়া সেন্টার ও সেখানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের (ফ্রি ওয়াইফাই জোন) ব্যবস্থা করা হবে৷

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করা হবে৷ যেখানে সার্বক্ষনিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা থাকবেন৷
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, তাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে৷ বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হচ্ছে৷ মুসলি্লদের বিনামূল্যে চিকিত্‍সা সেবা দিতে মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে৷ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে৷ আশপাশের খাবারের দোকানে ও ইজতেমাস্থল এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে৷

বিআরটিসির পরিচালক কর্নেল মো. আব্দুল্লাহিল করিম জানান, মুসলি্লদের যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৩০০টি বাস চলাচল করবে৷ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিদেশি মেহমানদের যাতায়তের জন্য ৬টি এসি বাসও থাকবে৷