rakib-uddin_46390_187054

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ৪ ফেব্রুয়ারি: ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ৷বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা জানান৷

এই মুহূর্তে যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন করতে হয়, তাহলে ইসি প্রস্তুত কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে নেবে৷ নির্বাচন কমিশনকে সব সময় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়৷ যেমন, এখন যদি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডিসিসির নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করে, তাহলে আমাদের নির্বাচন করতে হবে৷

কবে নাগাদ ডিসিসি নির্বাচন হতে পারে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সীমানা জটিলতা নিরসন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করবে৷সেই গেজেটের কপি হাতে না পেলেই আমরা নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবো৷ সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচনের ব্যয় সংক্রান্ত অর্থ চেয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে৷

দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট বিষয়ে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনীতিবিদদের সমাধান করতে হবে৷ এখানে নির্বাচন কমিশনের করার কিছু নেই৷ আমরা দেশের মাথাও নই, অঙ্গও নই৷ ইসির দায়িত্ব ও কাজের পরিধি সংবিধানে বলা আছে৷

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে ইসি, তাই চলমান সঙ্কট নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দেই৷ কিন্তু তাদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে৷ তারা সেভাবে চলে৷

কবে নাগাদদেশের নাগরিকরা স্মার্টকার্ড হাতে পেতে পারে জানতে চাইলে রকিব উদ্দিন বলেন, কিছুটা আইনি জটিলতা ছিল, আমরা সেগুলো নিরসন করেছি৷ তাছাড়া এতগুলো কার্ডের কাজ শুরু করলেও অনেক সময় লাগে৷ তারপরও আমরা অনেকটা এগিয়েছি৷আইডিয়া প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠকে এওসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, আবু হাফিজ প্রমুখ৷প্রসঙ্গত, আইনি জটিলতায় প্রায় সাত বছর আটকে থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)৷ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ এর জন্য বাজেটে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ইসি৷

কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচন করতে সংস্থানকৃত ৫০ কোটি ছাড়াও চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে নির্বাচন ব্যয় খাতে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৯৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ডিসিসি (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচনের জন্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সীমানা জটিলতায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি৷ তাই ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ছাড়াই বাজেট প্রস্তাব করে ইসি৷ কিন্তু রোববার সংশোধিত বাজেটে ওই নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত করে অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে৷

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাস্তবতা নিরীখে নিয়মিত নির্বাচন বাজেটের প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করে থাকে৷ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিক বাজেট প্রাক্কলন অর্থ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে৷ অর্থ বিভাগে প্রেরিত সংশোধিত প্রাক্কলনের ওপর অনুষ্ঠিত সভার মাধ্যমে কমিশনের নির্বাচনী ব্যয় খাতে ৫০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে৷

চিঠিতে আরো বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল হয় এবং আদালদের নির্দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করা হয়৷ গত ১৩ মে উচ্চ আদালত রিটটি খারিজ করেন৷ কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা জটিলতার কারণে পুনরায় আয়োজন করা সম্ভব হয়নি৷ সরকার সীমানা জটিলতা নিরসন করলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷

এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ব্যয়সহ অন্যান্য নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘নির্বাচন ব্যয়’ খাতে মোট ৯৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে৷প্রসঙ্গত, নির্বাচিত ডিসিসির মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হলেও সাত বছর ধরে বিভিন্ন কারণে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি ইসি৷ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কারণেই নির্বাচন করতে পারছে না বলে ইসি বরাবরই অভিযোগ করেছে৷ তবে কেউ কেউ মনে করেন, শুধু রাজনৈতিক কারণেই নির্বাচন বিলম্বিত হয়েছে৷ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুসারে, নতুন করপোরেশন গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে এবং নির্বাচিত করপোরেশন বিদ্যমান থাকলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে৷

ঢাকা সিটি করপোরেশন দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার আগে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সে হিসাবে ২০০৭ সালের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সেটা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন৷ ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নামে দু’ভাগ করা হয়৷ ২০১১ সালের শুরুতে নির্বাচন করার কথা ভাবলেও ডিসিসিকে ভেঙে দুই ভাগ করা হলে সীমানা জটিলতা শুরু হয়৷ পরে সরকার দুই সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে৷ বর্তমানে প্রশাসকের মাধ্যমেই নিয়মিত কাজ চলছে৷