1 (38)

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি:  বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের পরিবেশনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে ইউসুফ হাসান অর্ক এর নির্দেশনায় নাটক ‘তোতা কাহিনী’ ১৩-১৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের কলকাতাস্থ ওহফরধহ ঐধঢ়ঢ়বহরহমং রবীন্দ্র উৎসব ২০১৫ অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশের ১৭(সতেরো) সদস্য বিশিষ্ট সংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল উৎসবে অংশগ্রহণের লক্ষে আগামীকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঢাকা ত্যাগ করবে। উৎসবে নাটকটি কলকাতায় ১৪ এবং শান্তিনিকেতনে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মঞ্চায়নের বিষয়টি আয়োজক সংস্থা কর্তৃক ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। তোতা কাহিনী প্রযোজনাটি ওহফরধহ ঐধঢ়ঢ়বহরহমং রবীন্দ্র উৎসবে অংশগ্রহণের লক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় বেশকিছুদিন ধরেই নাটকটির মহড়া চালানোর পরে গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ৭.০০টায় একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়। প্রতিনিধি দলটির টিমলিডার হিসেবে আছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগামার জনাব রতন চন্দ্র পাল এবং লাইট ডিজাইনার এবং টেকনিক্যাল ম্যানেজার হিসেবে আছেন জনাব এরশাদ হাসান। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোমা মুমতাজ, অনামিকা আক্তার সোমা, শ্রাবন্তী গুপ্ত চুমকি, মনামি ইসলাম কনক, নুসরাত জাহান জিসা, মো: রাফি আল আমিন, মীর নওফেল আশরাফী জিসান, মাহি জাওয়াদ, মো: জাহিদুল ইসলাম, মাশরুরুল বেলাল, মো: তারেক আহমেদ, আল মাহমুদ বাধন, তাসমিনা তাবাসসুম ও এস এম ইত্তেশামুল হুদা। প্রতিনিধি দলটি আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ঢাকায় ফিরবে বলে আসা করা যাচ্ছে।

গল্পে তোতা পাখির তোতা পাখির শিক্ষা নিয়ে রাজা, মন্ত্রি ও রাজার ভাগিনাদের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের অন্ত নেই। আয়োজনের প্রক্রিয়ায় তথাকথিত পণ্ডিত, মধ্যসত্ত্বভোগী আর চাটুকারের দল যথারীতি তাদের নিজ নিজ রূপে আবির্ভূত হয়ে পাখিটিকে ‘শিক্ষিত’ করে তুলবার জন্য নিয়োজিত হন। আয়োজনের এই আতিশয্যে পাখির স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়ে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক কাঠামোর যাতাকলে পিষ্ট পাখিটি তথাকথিত পাঠক্রমের শৃঙ্খলা দ্বারা জরাগ্রস্থ ও জীর্ণ হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। অবশেষে সোনার খাঁচাটিকে ফেলে রেখে পাখিটির যথারীতি মৃত্যু ঘটে।

1 (25)
গল্পটি নিয়ে আমরা মহড়া কক্ষে অনেক আলোচনা করেছি। গোড়া থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত তোতার শিক্ষাব্যবস্থার সমান্তরালে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু তুলনামূলক দৃশ্যকল্প রচনা করা যা আমাদের সকলকে কিছু ভাবনার অবকাশ দেয়। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনার আলোকে বর্তমান নাট্যে নট-নটির ও দর্শকের অংশগ্রহণে একটি প্রাণবন্ত ও স্বতঃষ্ফুর্ত দ্বিপাক্ষিক অংশগ্রহণমূলক পরিবেশনার উপস্থাপন আমাদের উদ্দেশ্য হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। স্থির কোন সিন্ধান্তে পৌঁছানোর পরিকল্পনা আমাদের কখনো ছিলো না। আমরা চেয়েছি ‘তোতাকাহিনী’র শিক্ষাব্যবস্থার আদলে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার বাণিজ্যিকিকরণ ও এর শৃঙ্খলাজাত নানা বিকট রূপ দর্শকের সামনে তুলে ধরতে।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন রচনা নিয়ে ভাবতে গেলে কতো কিছুই না ভাবতে হয়- এ রকম একটা ভীতি নিয়ে ‘তোতাকাহিনী’ প্রযোজনাটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ভীতিটা যে অমূলক নয়, কাজ করতে গিয়ে তা আরো একবার বোঝা হলো। সহজতার মধ্যে সৌন্দর্যের অন্বেষণ যে কতো গভীর উপলব্ধির ব্যাপার তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “পরিচিতের মধ্যে অপরিচিতের ব্যঞ্জনা” তে বুঝিয়ে দিয়ে যান। তার প্রতিটি ছত্রের পরতে পরতে তাই দেখি অনেক রঙ, অনেক সুর, অনেক চিত্র। সেগুলো সহজ-সুন্দর এবং সমকাল-অতিক্রমী চিরকালীন। মঞ্চ প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সেই সহজ সৌন্দর্যের অন্বেষণ ছিলো অবিরত। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু ইঙ্গিতময় দৃশ্য মঞ্চে রচনার পর দৃশ্যগুলোর তুলনামুলক বিচারের মধ্য দিয়ে অবার রবীন্দ্রনাথের সর্বকালীন হওয়ার শক্তিটুকুকে নিরীক্ষণ করে দেখা গেলো ।

বাঙলা নাটকের ঐতিহ্যিক চেতনা থেকে ভূমি-সমতল মঞ্চে দোহার-সহযোগে এর বর্ণনামূলক অভিনয়শৈলী নির্মাণ করা হলেও যে কোনো মঞ্চে অভিনীত হওয়ার সম্ভাব্যতা এ নাট্যের শরীরে রয়েছে। মূল গল্পের গদ্যের সাথে লেখকের শিক্ষা বিষয়ক আরো কিছু রচনার গ্রন্থনাও ছিলো এক ধরনের গবেষণা। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী রচনা বলেই গদ্যের দু’একটি ছত্র সুরারোপ করার ধৃষ্টতা পাওয়া গেছে। তাতে আমাদের বোঝাপড়াটা আরো পরিষ্কার হয়েছে এইভাবে যে, সত্যিকার অর্থেই ‘বাঙলা নাট্য’ গান হয়েও নাটক, নাটক হয়েও গান; কিংবা গল্প, কবিতা, চিত্র- আরো, আরো অনেক কিছু।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক আনাই হয়তো বলা হয়েছে আমাদের। বাকী পনেরো আনার খবর নেওয়ার তাগিদটুকু রাখা গেছে।