NHY-1425634877

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ মার্চ: সারাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা টানা হরতাল-অবরোধে নাজুক হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৬০% পণ্য সরবরাহ কমেছে কারওয়ান বাজারের পাইকারি আরতেই। পাশাপাশি পাইকার না থাকায় কমে গেছে বিক্রিও।এ অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। এদিকে, পাইকারি বাজারে দাম কম হলেও খুচরা বাজারে শাকসবজি মাছ মাংশ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।আরতদারদের দাবি, স্বাভাবিক সময়ে প্রতি দিনে গড়ে ৫ লাখ টাকার লেনদেন হলেও এখন তা নেমে এসেছে দুই লাখেরও নিচে। আবার হরতাল-অবরোধের কারণে আরতে ঢাকার বাইরের পাইকারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য, আরতে পঁচে নষ্ট হচ্ছে তা।তবে খুচরা বাজারে চিত্র আবার ভিন্ন। ট্র্যাক থেকে নেমে কয়েক গজ দুরে খুচরা বাজারে এসব সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবার প্রশ্ন আর কতদিন চলবে এ অস্থিরতা। কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে নিত্য পণ্যের বাজার।এদিকে, মেহেরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে ৩ হাজার ৮০০ পিস ফুলকপি নিয়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইকবাল কৃষকের কাছ থেকে প্রতি পিস ফুলকপি কিনেছেন ৪ টাকা করে, প্রতি পিসের পরিবহন ব্যয় পড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা আর অন্যান্য খরচ ৩ হাজার টাকা।সব মিলিয়ে প্রতি পিস ফুলকপিতে তারা ব্যয় হয়েছে ১০ টাকার ওপরে। কিন্তু বিক্রি করছেন মাত্র চার টাকা দরে। চলমান অবরোধ হরতালে সরবরাহ কমে আসায় সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে গেছে ফার্মের মুরগির দাম। রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার ও লেয়ার উভয় ধরনের মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাজারে বয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৬০-১৭০ টাকা ও লেয়ার মুরগি ১৬৫-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও বয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।বিক্রেতারা জানান, মুরগির সরবরাহ কমে আসায় ফার্মের মুরগির দামের এ উর্ধ্বগতি । তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসলে কয়েক দিনের মধ্যেই এ দাম কমে আসবে।সরবরাহ কমার কারণে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, অবরোধ-হরতালের কারণে অনেক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী উৎপাদন বন্ধ রেখেছিলেন। এ কারণেই সরবরাহ কমেছে। এছাড়া পোল্ট্রি মুরগী রাজধানীতে সরবরাহ করা এখন কঠিন হয়ে গেছে। সেকারণে চাষিরা দাম কম পাচ্ছেন। যার ফলে পোল্ট্রি চাষেও তারা দিনে দিনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।এদিকে ফার্মের মুরগির দাম বাড়লেও দেশি মুরগিসহ অন্যান্য মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এর মধ্যে দেশি মুরগি প্রতিটি ৩০০ টাকা, কবুতর ১২০-১৩০ টাকা এবং গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৩৬০-৩৮০, খাসির মাংস ৫৫০-৫৬০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে গত দু’তিন সপ্তাহের েেচয়ে শুক্রবার বাজারে গৃহিনীর নিত্য প্রয়োজনীয় পেয়াজের দাম খানিকটা কমেছে। দেশী পেয়াজ-৩৮-৪০, ভারতীয় পেয়াজ ২৫-৩২, রসুন ৫০-৭৫ টাকা এবং আদা ১০০-১২০ টাকা দামে বিত্রি হতে দখো যায়ে। পেয়াজের দাম কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়াজ চাষিরা পেয়াজ তুলে তা বাজারজাত করছেন। আবার ভারত থেকেও পেয়াজ আমদানী হচ্ছে বলে জানান তারা।পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়োদুধ, ডিম, আটা, ময়দা, সুজি, রসুন, আদা ও পেঁয়াজের দাম অপরিবর্তিত আছে, আগের সেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। দিনে দিনে এসব মালামালের সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে, তবু দোকানীরা সেই বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব জিনিষ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

image_1022_131708

এদিকে চালের সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। যদিও এ সপ্তাহে চালের বাজার নিম্মগতি হওয়া উচিৎ ছিলো বলে জানান অনেক খুচরো ব্যবসায়ী। তারা মনে করেন রাজনৈতিক এ ঢামাডোলে পাইকার ও মজুদদাররা অধিক লাভের আশায় বাজারে এ কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চলেছেন। সে কারণে এখনো চালের দাম কমেনি।এছাড়া সবজির দাম আইটেম ভেদে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং কমছে। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে কেজিপ্রতি ঢেড়স ৬০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, উচ্ছে ৫০ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, গাজর ২৫ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, আলু ১৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা ও লাউ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ধনেপাতা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় দ্বিগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দিন ধনেপাতা কেজিপ্রতি ১০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছিল। আর সদ্য বাজারে আসা সজিনা ডাটা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে।

বিক্রেতারা জানান, নতুন আইটেম সজনে ডাটা সবে বাজারে আসছে তাই দাম একটু বেশীই। আর গরম বাড়ার কারণে ধনেপাতার দাম বেড়েছে। এছাড়া মৌসুম শেষ হয়ে আসার কারণে সব ধরনের কপি জাতীয় পণ্যের দামও একটু বেশি।এদিকে মাছের বাজার বেশ গরম বলে জানালেন ক্রেতারা। মোহম্মদপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেল প্রতিটি মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। আর বর্তমানে মাছের সিজন না হওয়ায় এবং মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে এই মূল্য বৃদ্ধি বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, এমনিতে শুক্রবারে বাজারে চাহিদা বেশী থাকে, তার ফরে মাছের সরবরাহ পরিবহনসঙ্কটও রয়েছেন। সেই সাথে দিনে দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা মৎস উদপাদন কেন্দ্রগুলো সেচে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন রকমের মাছ আমদানি হচ্ছে না। আবার সব ধরনের মাংসের দাম বেশী থাকায় মাছের চাহিদাও খানিকটা বেড়েছে। যার জন্য আজ সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশী।

এদিকে রামপুরার বাসিন্দা শ্রাবণী হালদার বলেন, গত ২ মাসাধিক অবরোধ হরতালে বাজার উর্ধ্বমুখি। কিন্তু এখন গাড়ি ঘোড়া চলাচল করছে, মালামাল শুনছি আনা- নেয়া সহজ হয়েছে, তবুও ব্যবসায়ীরা দাম না কমিয়ে সেই বাড়তি দামে বিক্রি করছে। আর এর জন্য সমস্যায় পড়েছেন ক্রেতারা। আবার বেসরকারী কলেজের শিক্ষক রাজু বলেন, আসলে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার সুযোগে এখন বাজার চলে গেছে এক শ্রেণীর অসাধু ফড়িয়াদের হাতে। এই সব ফড়িয়া বা কালোবাজারী মাল মজুত করে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে চলেছে। যার ফলে অধিক লাভবান হচ্ছেন তারা। আর অসুবিধায় আছে আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষ।তবে ক্রেতাদের দাবি- বাজারে এই টালটামাল অবস্থার কারণে সব চেয়ে তারাই বেশী সমস্যায় পড়েছেন। তারা টিসিবির মাধ্যমে পেয়াজ, রসুন, বিভিন্ন ধরনের ডাল, চিনি, আটা, তেল ইত্যাদি বিক্রির দাবি জানান।