8683_1

দৈনিকবার্তা-খাগড়াছড়ি, ২০ মার্চ: দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি শুক্রবার এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর স্থাপনের নামে অবৈধ ভূমি অধিগ্রহণ ও এর সদর দপ্তর অন্যত্র নির্মাণের দাবিতে চলমান গণ আন্দোলন সম্পর্কে বিজিবি খাগড়াছড়ি সেক্টরের অপপ্রচারণার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক পরিতোষ চাকমা ও সদস্য সচিব ধর্ম জ্যোতি চাকমা সংবাদ মাধ্যমে দেয়া উক্ত বিবৃতিতে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বিষয়ে বিজিবির সংবাদ সম্মেলনে দেয়া আলোচনার প্রস্তাবকে ইতিবাচক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘তবে ভারত প্রত্যাগত এই সব দরিদ্র শরণার্থী পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করতে হবে।নেতৃবৃন্দ বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের জন্য স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবি সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়নের অন্যত্র তাদের সদর দপ্তর নির্মাণের সুযোগ আছে, কিন্তু উচ্ছেদ হওয়া ভারত প্রত্যাগত ২১ পরিবারের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, উচ্ছেদ হওয়ার পর তারা এখন নিজ দেশে পরবাসীর মতো মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।বাবুছড়া হতে ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করা কোন আন্দোলনের ইস্যু হতে পারে না’ মর্মে বিজিবি খাগড়াছড়ি সেক্টর কমান্ডারের বক্তব্যের সমালোচনা করে তারা বলেন, ‘বিজিবির কাছে এটা সে রকম মনে হতে পারে, কিন্তু বার বার উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের কাছে জমি হারানোর বিষয়টি একটি জীবন মরণের সমস্যা, এটা তাদের জন্য বড় একটি ইস্যু।

ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন করে বলেন, ‘বিজিবি সমতল জেলায় স্থানীয় জনগণের প্রবল বাধা ও আন্দোলনের মুখে অর্থাৎ জনমতের চাপে নির্ধারিত স্থানে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন বন্ধ করতে বাধ্য হলে, দীঘিনালার ক্ষেত্রে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন না কেন?’স্থানীয় জনগণের সাথে বৈরীতা করে কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তার কাজে সফল হতে পারে না মন্তব্য করে তারা বলেন ‘এ দেশ কেবল বিজিবির নয় এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বও কেবল তাদের নয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অবশ্যই দেশের আপামর জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর এ জন্য দরকার তাদের সাথে সদ্ভাব ও সুসম্পর্ক।ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদের আইন লঙ্ঘন করে ও হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে দীঘিনালায় উক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া কাগজে পত্রে ২৯.৮১ একর অধিগ্রহণের কথা লেখা হলেও, বিজিবি বাস্তবে স্কুলের ও এমন অনেক ব্যক্তির জমিও দখলে নিয়েছে যাদের নামে কোন অধিগ্রহণ নোটিশ জারী করা হয়নি। এই স্কুল এবং বাড়তি জমিও বিজিবি তাদের কাঁটাতারের বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছে। এ কারণে ছাত্রদের পড়াশোনায় বিঘœ হচ্ছে এবং অন্যান্য ভূমি মালিকরা তাদের নিজ বাড়িঘরে ও জমিতে যেতে পারছেন না।

গত বছর ১০ জুনের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবির ভুল তথ্য পরিবেশনের সমালোচনা করে পরিতোষ চাকমা ও ধর্ম জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘ঐদিন গ্রামের কয়েকজন নারী তাদের জমিতে কলাগাছ রোপন করতে গেলে বিজিবি বাধা দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে গ্রামের লোকজন প্রতিবাদ করলে বিজিবি, পুলিশ ও বাঙালি শ্রমিকরা তাদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এতে ১৮ জন পাহাড়ি গ্রামবাসী আহত হন, যাদের অধিকাংশ হলেন বৃদ্ধ নারী। এদিনই রাতে বিজিবি ২১ পরিবারকে তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে দিয়ে কোন ধরনের আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া বলপূর্বক উচ্ছেদ করে। কয়েকজন পাহাড়ি নারী খালি হাতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিজিবি সদস্যদের উপর হামলা করতে গেছে, বিজিবির এই দাবি জ্বলন্ত মিথ্যাচার, কল্পনাপ্রসূত ও হাস্যকর।’

গত ১৫ মার্চের পদযাত্রা সম্পর্কে পরিবেশিত বিজিবির তথ্যকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃদ্বয় বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা উক্ত পদযাত্রায় অংশগ্রহণে লোকজনকে বিভিন্ন স্থানে কেবল বাধা দেয়নি, তারা বিনা উস্কানিতে তাদের উপর হামলা ও গুলি চালায় এবং বেধড়ক লাঠিপেটা করে ৮ জনকে গুরুতর আহত করে। এছাড়া ৮০০ জনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয় ও ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ১জন কলেজ ছাত্রীসহ ১১ জনকে এখনো জেলে আটক রাখা হয়েছে।’

বিবৃতিতে তারা বিজিবিকে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দেন এবং অবিলম্বে উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারের কাছে তাদের নিজ জমি ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন, বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের স্থান অন্যত্র নির্বাচন, উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিগণসহ দীঘিনালাবাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।তারা বলেন তাদের এই দাবি ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত এবং তাদের এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটি সদস্য সচিব ধর্ম জ্যোতি চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।