মেয়র মান্নান

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২০ এপ্রিল: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়রের পদ থেকে শীঘ্রই বরখাস্ত হতে পারেন। মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গুলোর মধ্যে একটি মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশীট নং ৩৬৯) আদালতে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জনসভার অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে জেলা বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর মহানগরীর বড়বাড়ি এলাকায় একটি মাইক্রেবাস ও একটি লেগুনা ভাংচুর, টাকা ও ক্যামেরা ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযোগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলনসহ ৩০ নেতাকর্মীর নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এমএ ফরিদ নামের এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তুলা মিয়া, জুয়েল ও জয়নাল নামে ৩ জনকে আটক করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ওই মামলার চার্জশীট দেয়। অভিযোগপত্রে এজাহার নামীয় ১২জনকে বাদ দিয়ে আরো ৯জনকে চার্জশীটে অন্তঃর্ভূক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা গত ১৫ এপ্রিল চার্জশীটটি (নং ৩৬৯) অগ্রবর্তি করে বিচারের জন্য আদালতে পাঠিয়েছেন। চার্জশীটে জিসিসি মেয়র মান্নানকে ৩নং এবং ফজলুল হক মিলনকে ৪নং আসামী দেখানো হয়েছে। চার্জশীটে অভিযুক্ত অন্য আসামীরা হলেন, তুলা মিয়া, জয়নাল, ছামান আলী, আরিফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন আনু, ফরিদ হোসেন, শরীফুল ইসলাম শরিফ, রওশন আলী, হারিস মিয়া, শাহাদাৎ হোসেন বকুল, জাহাঙ্গীর হাজারী, মোশারফ হোসেন ভূইয়া, ওয়াসিম, ফারুক খান, দেলোয়ার মোল্লা, আবু বক্কর, কামরুল, জহর আলী, রুবেল সরকার, ইউসুফ সরকার, মির্জা সফিক, নূরুল হক, আজিজ, হাবিব, হাজী মুনছুর, আসাদ মোল্লা, সাহাজ উদ্দিন, আব্দুর রহমান এরশাদ মোল্লা, আব্দুস ছালাম, মোজাম্মেল হক, নাসির উদ্দিন। এজাহার নামীয় যে ১২ জনকে চার্জশীট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা হলেন, খায়রুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসাদ, সবুজ মিয়া, হাজী আব্দুস সালাম, জাহিদ হাসান, সাইফুল ইসলাম, উজ্জল, রুবেল খান, শরিফ, জুয়েল, আউয়াল সরকার, মোখলেছ।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন), স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) ও স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কোন জনপ্রতিনিধি যে কোন ধরনের ফৌজধারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (চার্জশীট আদালত কর্তৃক গৃহীত হলে) কিংবা ওই জনপ্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে।

এদিকে গাজীপুর সিটি মেয়র মান্নানের নামে চার্জশীট প্রদানের খবরে বিএনপি শিবিরে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা। মেয়র মান্নানকে ঘিরে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের এখন নগর ভবনে আনাগোনা নেই। মান্নানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ নতুন ভাবে নিজ পরিকল্পনায় কাউন্সিলরদের সঙ্গে পরামর্শ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরশনের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুর সিটি মেয়র মান্নান গ্রেয়তারের পর তার অনুপস্থিতিতে গত ৮ মার্চ প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলার আসামি হিসেবে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানী বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গাজীপুর পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে।

সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসন থেকে দেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯১ বিএনপি সরকারের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, দলের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। তিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে আছেন। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছেন। তার আইনজীবী ড. শহীদুজ্জামান জানান, অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে নাশকতার জন্য গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সরকারী কাজে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে জয়দেবপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। জিসিসি মেয়র অধ্যাপক মান্নান অন্য মামলায় বর্তমানে কারাগারে বন্দি আছেন।