DoinikBarta_দৈনিকবার্তাThakurgaon Rashom Karkhana Pic_1

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ২০ মে: ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা চালু প্রতিশ্র“তি আওয়ামীলীগ-বিএনপি দিলেও কেউ কথা রাখেনি। কারখানাটিকে চালু করার জন্য দু’দলের নেতাদের বাড়িতে ধর্না দিয়েছে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা। তাই রেশম কারখানাটি দীর্ঘ ১৩ বছর যাবৎ বন্ধ থাকায় ঠাকুরগাঁও জোনের ১শ’ শ্রমিক ও ১০ হাজার রেশম চাষী বেকার হয়ে পড়েছে। কারখানার অনেক কক্ষে ঝুলছে বড় বড় তালা। কর্মচারীরা টেবিলেই ঘুমাচ্ছে। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হতে বসেছে।

১৯৭৭-৭৮ সালে আরডিআরএস বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁওয়ে ৬টি রেশম তুত বাগান সহ এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। তখন থেকেই ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা চাষীরা রেশম চাষ শুরু করে। পরে এই কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ধীরে ধীরে ১০ হাজার চাষী রেশম গুটি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হয়। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকায়ণের কাজ শুরু করা হয়। নতুন ভবন নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, পুরাতন যন্ত্রপাতি মেরামত, সংস্থাপন ও যানবাহন ক্রয় করে আধুনিক করনে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়। কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালে। সে সময় বছরে এই কারখানার উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মিটার উন্নত মানের রেশম সুতা। কিন্তু এই কারখানাটি একদিনের জন্যও উৎপাদনের মুখ দেখেনি।

DoinikBarta_দৈনিকবার্তাThakurgaon Rashom Karkhana Pic_2

কয়েকজন রেশম চাষী জানান, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি বন্ধ ঘোষনা করায় তারা রেশম গুটির নায্য দাম পাচ্ছে না। রেশম কারখানাটি বন্ধ থাকায় লাখ লাখ তুঁত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যারা এখনো গুটি উৎপাদন ধরে রেখেছেন তারা তুঁত গাছের অভাবে সমস্যায় পড়েছেন। গ্রামে অনেক রাস্তার দু’পাশের তুঁত গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের ঠান্ডিরাম রেশম বাগানসহ ৬টি রেশম বাগান এখন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক রেশম চাষী কোন কোন মৌসুমে গুটি উৎপাদন বন্ধ রাখেন।আকচা গ্রামের রেশম চাষী ইউনুস আলী জানান, তারা খুব সমস্যার মধ্যে পলু পালন করেছেন। তাদের আলাদা কোন ঘর নেই। ব্র্যাকে পলু পালনের জন্য আলাদা ঘর তৈরী করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দেয়নি। এজন্য তাদের অনেক রেশম পোকা মারা গেছে। তুঁত গাছ কেটে ফেলায় তারা রেশম পোকার খাদ্য সংগ্রহ করতে পাচ্ছে না। অনেক গুটি উৎপাদন করলেও ভালো ফলন পাচ্ছে না।রেশম সম্প্রসারণ বিভাগের রেশম প্রতিপাদক হুমায়ুন রেজা জানান, আমরা রেশম চাষীদের পলু পালনে প্রশিক্ষণ দেই। প্রান্তিক চাষীদের নিজস্ব জমি নেই। তাদের উৎপাদিত গুটি আমরা সরকারী দামে ক্রয় করি।সহকারী পরিচালক সাজাদুর রহমান জানান, সরকার মিনি ফিলেচারের মাধ্যমে চাষীদের কাছে থেকে এখন বছরে ৬/৭ হাজার কেজি গুটি কিনছে।

DoinikBarta_দৈনিকবার্তাThakurgaon Rashom Karkhana Pic_3

লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালিন বিএনপির সরকারের আমলে মিলটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত রেশম কারখানাটি অর্থহীন হয়ে পরে। কারখানাটি বন্ধ থাকায় দামী দামী যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হতে বসেছে। কারখানার ভেতরে মাকড়সার জাল ও ধুলো বালুতে ভরে গেছে। সেই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে কারখানার ৭৭ জন শ্রমিক ও ৩৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। বিপাকে পরেছে ১০ হাজার রেশম চাষী পরিবার। কারখানাটি বন্ধ থাকায় নিজ দায়িত্বে কিছু চাষী গুটি উৎপাদন করলেও নাম মাত্র দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের রেশম চাষীদের দাবী কারখানাটি পুনরায় চালু করা হোক। এই রেশম কারখানা চালু হলে রেশম চাষের সাথে যুক্ত ১০ হাজার রেশম চাষী পুনরায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে।