E-Tender_Gov

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ মে: দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি ঠেকাতে ই-টেন্ডারিংয়ের সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এ পর্যন্ত ২০টির বেশি সরকারি অফিসে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এ পদ্ধতিতে। ফলে ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সব কাজ করতে পারছেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ই-টেন্ডারিংয়ে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ভালো করেছে। এ প্রক্রিয়ার পাইলট কার্যক্রম সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ই-টেন্ডারিং মূল্যায়ন সংক্রান্ত ১১ সদস্যের একটি মিশন এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে।

ই-টেন্ডারিং প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব জানান, আমরা আশাবাদী এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির দিনও শেষ হবে। কেননা ইতিমধ্যেই ই-টেন্ডারিং বাংলাদেশে প্রশংসনীয়ভাবে এগিয়েছে। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হচ্ছে ২০১২ সালের জুন মাসে যেখানে রেজিস্ট্রিকৃত ঠিকাদারের সংখ্যা ছিল ২৯৪ জন, সেখানে এক বছরের কিছু সময়ের মধ্যেই এ সংখ্যা ৬ হাজার পার হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক অমূল্য কুমার দেবনাথ বলেন, অনলাইনে টেন্ডার ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে দরপত্র ছিনতাই ও দরপত্রদাতাদের ভয়ভীতি দেখানো বা কোনরকম দুর্নীতি করার সুযোগ থাকছে না। এছাড়া অনলাইনে প্রমিসের (প্রকিউরমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) মাধ্যমে সংস্থাসমূহের প্রক্রিয়াকরণকৃত দরপত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ই-টেন্ডারিং বাস্তবায়নের জন্য ৩৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারতীয় ফার্ম জিএসএস আমেরিকা ইনফোটেক লিমিটেডকে প্রধান পরামর্শক, এবিসি প্রকিউর এবং সরকার মনোনীত প্রতিষ্ঠান দোহাটেক নিউ মিডিয়াকে সহপরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য উপাদান ডিজিটাল সিগনেচার তৈরির জন্য ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটির নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) তৎকালীন মহাপরিচালক মাহফুজার রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া সরকারি ক্রয় বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সিপিটিইউ ৩ বছর মেয়াদি একটি যোগাযোগ কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করেছে। কৌশলপত্র অনুযায়ী বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা, কর্মশালা, বিনোদন, দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, টেলিভিশন, রেডিও, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশসহ বিভিন্নভাবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করে তোলার কাজ করা হয়।

প্রথম পর্যায়ে সরকারি চারটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালুর কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রতি বছর সরকারিভাবে যে ক্রয় কাজ করা হয় তার অধিকাংশই এ চারটি সংস্থা সম্পন্ন করে থাকে। তাই এ ৪টি বৃহৎ সংস্থাকেই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ই-জিপি পোর্টালের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭টি মন্ত্রণালয়ের ২১টি সংস্থার ১১৪টি অফিস ই-টেন্ডারিংয়ে যুক্ত হয়েছে। ৬ হাজার ৭৪৬ ঠিকাদার এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ১৮টি ব্যাংকের ৩৭৭টি শাখা সারা দেশে অনলাইনে দরপত্র সংক্রান্ত ফি ও সিকিউরিটি গ্রহণের কাজ করছে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও সিপিটিইউর লক্ষ্য ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৩৫টি টেন্ডার আহ্বান করার। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গত ২৫ নবেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৯২০টি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২০টির চুক্তি অনলাইনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ সমাপ্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত যেসব সরকারী সংস্থা যুক্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সেতু কর্তৃপক্ষ, বিবিএস, বিপিসি, বিপিডিপি, বিডব্লিউডিবি, ডিপিএইচই, ডেসকো, ডিপিডিসি, আইএমইডি, ডিসিসি দক্ষিণ, ঢাকা ওয়াসা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, জিটিসিএল, এলজিইডি, পিজিসিবি, পিডব্লিউডি, রাজউক, আরএইচডি, আরইবি এবং মাউশি। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এটি চালু করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এ সংস্থাগুলোর ১৭টি অফিসে চালু হয়েছিল প্রথম ই-টেন্ডারিং।