Donovan-girls

দৈনিকবার্তা-মাদারীপুর, ১০ জুন: সুবর্ণা আক্তার জেসিকা কতদিন না খেয়ে স্কুলে গেছে সে হিসেব তার জানা নেই, প্রাইভেট পড়তে, বই-খাতা কিনতে, পরীক্ষার ফি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দিতে কত মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছে এসব মনে করে আজ চম্কে ওঠে সে। তবুও তার মনে কোন দুঃখ নেই। কারণ সুবর্ণা এবার মাদারীপুর ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শত বাঁধা পেরিয়ে সাফল্যের শীর্ষে এসেও মিলিয়ে যাচ্ছে তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। শুধু ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নই নয়-তার লেখা-পড়াও আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যত এখন তাকে কুড়ে-কুড়ে খাচ্ছে। আগামীতে কিভাবে কলেজে ভর্তি হবে? কোথায় পাবে কলেজে ভর্তির ও বই-পুস্তক কেনার টাকা-পয়সা, এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে সুবর্ণার পরিবার। সুযোগ পেলে মেধাবি সুবর্ণা সত্যি ডাক্তার হতে পারবে এমন প্রত্যাশা তার এবং তার পরিবার ও প্রতিবেশির। সে ডাক্তার হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দিতে চায়, মেয়েরা সংসারের বোঝা নয়। মেয়েরাও পারে সংসার ও সমাজের পরিবর্তন আনতে।

সুবর্ণার পিতা আবুল কালাম হাওলাদার একজন বদলি পরিবহন শ্রমিক। মা আকলিমা বেগম গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সুবর্ণা দ্বিতীয় এবং পরিবারের একমাত্র মেয়ে সন্তান। মাদারীপুর শহরের পাঠককান্দি এলাকায় তাদের বসবাস। পিতার আয় প্রতিদিন সর্বোচ্চ দু’শ টাকা। তাও আবার কোনদিন হয়, কোনদিন হয়ও না। এ নিয়েই খূঁড়িয়ে খূঁড়িয়ে চলে তাদের সংসার। যেখানে দারিদ্রতাই তাদের পরিবারের একমাত্র সাথী। লেখাপড়া না জানা মা-বাবা’র সন্তান অদম্য মেধাবি; এ নিয়ে গর্ব তাদের। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার ভবিষ্যত চিন্তা করে চোখের নোনা পানিতে বুক ভাসানো ছাড়া আর কিছু করার নেই। দারিদ্রতা কি তাহলে অভিশাপ! মেয়েকে ঘিরেই তাদের স্বপ্ন- তাদের আশা ভরসা। আয় রোজগার না থাকায় নুন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা সংসারে। এমন দারিদ্রতার কষাঘাতে কিভাবে সুবর্ণা ডাক্তার হবে, এ নিয়েই তাদের যত ভাবনা।