rmc-bd

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ০৬ জুলাই ২০১৫: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মকর্তা পদটি সৃষ্টি হয় প্রায় ২৩ বছর আগে৷ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে গরিব অসহায় রোগীদের তালিকা তৈরী ও তাদের নানা রকম সহযোগিতার জন্য এ পদটি সৃষ্ট করা হয়৷ তবে সময়ের পরিবর্তনে এটি এখন কেবলই শুধুমাত্র একটি পদে পরিণত হয়েছে৷ হাসপাতালের আর্থিক সঙ্কটের কারণে শুরু থেকেই কাজহীন হয়ে পড়েছে এই পদটি৷ অথচ সেই পদটি এখন পর্যনত্ম দখল করে আছেন হাসপাতালের অফিস সহকারী নার্গির আরা রম্নবি নামের এক নারী৷ এর ফলে প্রতিদিন সকাল ১১টার দিকে তিনি অফিসে আসেন৷ আবার হাজিরা দিয়ে ঘন্টা কানেক পরেই দুপুর ১২টার দিকে তিনি বাড়ি চলে যান৷ অভিযোগ উঠেছে, রুবির স্বামী মহিউদ্দিন মারুফ হলেন রামেক হাসপাতালের হিসাবরক্ষক৷ তিনি হাসপাতালে ক্ষমতাধর ব্যক্তি নামে পরিচিত৷ এই ক্ষমতাধর স্বামীর কারণেই স্ত্রী নার্গিস আরা রুবি প্রায় ২৩ বছর ধরে হাসপাতালের সমাজসেবা পদটি ধরে রেখেছেন৷

হাসপাতাল সূত্র মতে, ১৯৫৮ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯২ সালের দিকে সমাজসেবা কর্মকর্তা নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়৷ এর কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে হাসপাতালের অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান নার্গিস আরা রুবি৷ সমাজসেবা পদটি সৃষ্টি হওয়ার পরে স্বামী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফের তদবিরে নার্গিস আরা রুবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে দেওয়া হয় ওই পদে৷ তখন থেকেই তিনি এই পদটি ধরে রেখেছেন৷ তবে বর্তমানে সময়ের প্রেক্ষাপটে এ পদটিতে একেবারেই কাজ নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷

হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে গরিব-অসহায় রোগীদের তালিকা তৈরী করবেন৷ এরপর সেই তালিকা অনুয়ায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীদের ফ্রি ওষুধ থেকে শুরু করে প্রয়োজনে রক্ত প্রদানসহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা নিবে৷ কিন্তু শুরু থেকেই সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে সেই তালিকা না করে শুধুমাত্র অফিসে বসে সময় কাটান৷ সেই সঙ্গে রক্তসঞ্চালন বিভাগ থেকে যেসব গরিব ও অসহায় রোগীদের প্রি রক্ত দেওয়া হয়, তাদের নামগুলো খাতায় লিপিবদ্ধ করে চলে যান৷ আর এ কাজটি করতে তাঁর সময় ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১ঘন্টা৷ ফলে সকাল ১১টার দিকে সমাজসেবা কর্মকর্তা নার্গিস আরা রুবি অফিসে আসেন৷ আর ঘন্টা খানেক পরেই তিনি আবার বাড়ি চলে যান৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসপাতালের আর্থিক সঙ্কটের কারণে চাইলেও গরিব-দুঃখি রোগীদের সেইভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না৷ কাজেই যারা একানত্ম প্রয়োজনে নিজেদের উদ্যোগেই হাসপাতলের বিভিন্ন সেবা ফ্রি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, কেবল তাদেরটায় বিবেচনা করা হয়৷ এখানে নতুন করে আলাদা লোক নিয়োগ দিয়ে ওই কাজ করার প্রয়োজন হয় না৷ তারপরেও একই ব্যক্তিবে বছরের পর বছর ধরে রাখা হয়েছে সে কাজ করার জন্য৷ ফলে তিনি বসে বসে দিন কাটাচ্ছেন আর মাস শেষে বেতন নিয়ে যাচ্ছেন৷’

হাসপাতালের অপর একজন অফিস সহকারী বলেন, ‘রুবির স্বামী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা৷ তিনি হাসাপাতালে ৰমতাধর ব্যক্তি বলে পরিচিত৷ তাঁর দাপটের কারণেই ওই রুবি দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তার অজুহাতে হাসপাতালের অফিস সহকারির অন্যান্য কাজ থেকে এড়িয়ে চলেন৷ ফলে তাঁকে দিয়ে অন্য কোনো কাজ করানো যায় না৷ তিনি নিজের ইচ্ছাই অফিসে আসেন, আবার নিজের ইচ্ছেই বাড়ি যান৷ এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নার্গিস আরা রুবি বলেন, ‘আমার যা কাজ আমি তাই করি৷ আর কাজ না থাকলে অফিসে বসে থেকে লাভ কি৷’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো আমি কাজ করি৷ এর বাইরে আমার কোনো কাজ নাই৷’ নার্গিস আরা রুবির স্বামী মহিউদ্দিন মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব নিয়ে কোনো মনত্মব্য করতে রাজি হননি৷