Gournadi Photo-07.08

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল), ০৭ আগস্ট ২০১৫: আব্দর রহিম সরদার নামের এক বেঁদে সর্দারকে চাঁদা না দেওয়ার অপরাধে বরিশালের গৌরনদীর টরকীর চর গ্রামের বেঁদে পল্লীর অর্ধশত পরিবারের ২ শতাধিক সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মামলা ও হয়রানির ভয়ে ওই বেদে পল্লীর ২৫ টি পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।নির্যাতনের শিকার বেঁদে পল্লীর বাসিন্দা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সভার টরকীর চর এলাকায় গত ২০ বছর ধরে প্রায় ৫ শতাধিক বেদে পরিবার স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছেন। এক সময় ওই বেঁদে পল্লীর সর্দার ছিলেন ঝালকাঠী জেলার কৃঞ্চকাঠী গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলী সরদারের পুত্র রুস্তুম আলী ওরফে আব্দুর রহিম।বেঁদে পরিবারের সদস্যরা জানান, আব্দুর রহিম সর্দার ২০ জন নারী সদস্যসহ ৪০/৫০ জন বেঁদে নিয়ে একটি প্রতারক দল গঠন করেন। ওই দলের মাধ্যমে বেঁদেসহ বিভিন্ন গ্রামের সাধারন নিরহ মানুষের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। কেউ এ তার বিরোধিতা করলে তার রক্ষা নেই। তাদের শারিরিক নির্যাতনসহ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হয়। নানা অপকর্মের দায়ে ২০১১ সালে আব্দুর রহিমকে সর্দারের পদ থেকে অব্যহতি দেয় গৌরনদীর বেদেরা। এরপর আব্দুর রহিম নিজ বাড়ি ঝালকাঠীর কৃঞ্চকাঠী গ্রামে ফিরে যান। জানা গেছে, সেখানে গিয়ে নতুন করে একটি বেদে দল গঠন করে নিজেকে বরিশাল বিভাগীয় বেদে সর্দার হিসেবে নিজেকে ঘোষনা করেন। সেখানেও রাম রাজত্ব কায়েম করেন, যুক্ত হন মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সাথে। ঝালকাঠি বসেও তিনি এখনও গৌরনদীর বেদেদের একাধিক মিথ্যে মামলাসহ নানাভাবে হয়রানী করছেন।

টরকির চর বেঁদে পল্লীর নান্নু সরদার (৫৫), স্বপন সরদার (৩৮), জাহাঙ্গীর সরদার (৫৫) জানান, গৌরনদী ছেড়ে চলে যাবার পর বেদে সর্দার আব্দুর রহিম নুতন কৌশল অবলম্বন করে টরকির চর বেঁদে পল্লীর প্রতিটি বেদে পরিবারের কাছে মাসিক ৭ শত টাকা করে চাঁদা ধার্য করেন। এমনি ভাবে গত তিন বছরে তিনি বেদেদের কাছ থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। গত ৬ মাসে ধরে সাধারন বেদে পরিবারের লোকজন চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আব্দুর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বেঁদে স্বপন অভিযোগ করেন, চাঁদা না দেওয়ায় আব্দুর রহিম ঝালকাঠী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিথ্যা অভিযোগ এনে তার পরিবারের ৭ জনকে আসামি করে গত ১০ মে তিনি একটি মামলা করেন। স্বপন পলাতক থাকা অবস্থায় রহিম তার স্ত্রীকে খবর দিয়ে স্বামীকে মুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্ত্রী পাখি বেগম (৩০), কন্যা রাত্রীকে (৫) তার আস্তানায় ৭ দিন আটক রেখে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালান। পরবর্তীতে মামলা খরচসহ তার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করে মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একই ভাবে তিনি (রহিম সর্দার) বেদে মজিবর সরদার (৪০), আ. জলিল সরদারকে (৪৫) আসামি করে একই আদালতে গত ২৫ জুন একটি চাঁদাবাজি ও হত্যার চেষ্টা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মিমাংসার নামে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। বেদে কবির হোসেন, ছগির হোসেন, মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, চাঁদা না দেওয়ায় রহিম তার ভাই আলাউদ্দিনকে দিয়ে বাদি করে তাদের ৫ জনকে আসামি করে গত ১৫মে ওই আদালতে একটি মামলা করেন। পরবর্তীতে রহিমকে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করে মামলা থেকে অব্যহতি পান। পিকু সরদার জানান, চাদা না দেওয়ায় আব্দুর রহিম তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে গত ৩ বছরে ১৩টি মামলা করেন। মামলাগুলো মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। এ ঘটনায় পিকু গত ৪ জুলাই গৌরনদী থানায় রহিমের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন। এর আগে স্বপন সরদার গত ২৫ জুলাই গৌরনদী থানায় একটি জিডি করেন। ভূক্তভোগীরা জানান, অব্দুর রহিম তার বিভিন্ন সহযোগীকে দিয়ে ঝাালকাঠী জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করার পর আসামিরা সেখানে হাজির হতে গেলে রহিম তার লোকজন নিয়ে তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রহিমের নিজস্ব আদালতে বিচার সম্পন্ন করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে মিমাংসাপত্র দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

স্বপন সরদার অভিযোগ করেন, রহিমের মিথ্যে মামলা ও নানা ধরনের হয়রানির ভয়ে ওই বেদে পল্লীর মালেক সর্দার, মিন্টু সর্দার, লোকমান হোসেন, আবু হানিফ, খলিল খান, ইফতি সর্দার, সলেমানসহ ২৫ টি পরিবার বেদে পল্লী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, মামলা ছাড়াও রহিম সর্দার তার অনুগত কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের হয়রানী করছেন। তারা বরিশাল বিভাগের যে জায়গায় যান সেখানেই পুলিশ দিয়ে তিনি তাদের হয়রানী করেন।পিন্টু জানান, ২০১১ সালে ২২ সেপ্টেম্বর চাদা না দেওয়ায় রহিম তার বোনকে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। ওই ঘটনায় রহিমের বিরুদ্ধে গৌরনদী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া একাধিক বেদে কন্যাকে ধর্ষন করেছে। আত্ম সম্মানের ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যায়নি। বেঁদে সর্দার রহিমের হয়রানীর কবল থেকে রেহাই পেতে গৌরনদীর টরকীর চর বেঁদে পল্লীর সাধারন বেঁদেরা র‌্যাবসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।অভিযোগের ব্যাপারে আব্দুর রহিম মুঠো ফোনে নিজেকে নির্দোশ দাবি করে বলেন, আমি কারো কাছে চাঁদা দাবি করিনি বরং অভিযোগ কারীরাই আমার পল্লীর বেদেদের কাছে চাদা দাবি করেন। হয়রানী ও মিথ্যা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমি কাউকে হয়রানী করি নাই, ওরা খারাপ কাজের সাথে যুক্ত। এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বেদে পল্লীর আধিপত্য বিস্তারের বিরোধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য দেয় কিন্তু অভিযান চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি।