আদালত

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর:  প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলছেন, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান বিচারপতি।সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সম্পর্কে এস কে সিনহা বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, এটি কেমন হয়? আমি এখন হ্যাঁ অথবা না বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবীদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান বিচারপতি। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সারা দেশে অনেক মামলার নিষ্পত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মতবিনিময়ে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ দিলজার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল হুদা, মহানগর দায়রা জজ মো. শাহেনুর, মুখ্য মহানগর হাকিম মো. শাহজাহান কবির প্রমুখ।মতবিনিময়ের আগে বেলা ১১টার দিকে ডধান বিচারপতি চট্টগ্রাম আদালত পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি কয়েকটি এজলাসে গিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের যে দাবি উঠেছে তার সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। এটা সময়ের দাবি। একসময় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ ছিল। কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন শুধু চট্টগ্রাম নয় সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন বিভাগে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি উঠেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আমাকে বলা হয়েছে। সরকার প্রধান খুব সিরিয়াসলি বলেছেন, এটা একটু চিন্তা করেন। তবে আমি এখন হ্যাঁ বা না কিছুই বলতে পারবনা। বলেন প্রধান বিচারপতি। সিনহা বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমি অযথা কোন কথা বলব না। হাততালি পাওয়ার জন্যও কোন ঘোষণা দিতে চাই না। আমি সিরিয়াসলি চিন্তাভাবনা করছি। তবে সিদ্ধান্ত এখনই জানাতে পারছিনা।

প্রধান বিচারপতি হিসেবে কোন সিদ্ধান্ত আমি একতরফা নিইনা। সিনিয়র বিচারপতিদের পরামর্শ নিই। আইনজীবীদের যে অনুভূতি, সরকার প্রধান কিংবা বিরোধী দলের যে অনুভূতি এবং সিনিয়র আইনজীবীদের ইচ্ছা যৌথভাবে বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব। কিছু সময় হয়ত লাগতে পারে। তবে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেব।বলেন সিনহা। প্রধান বিচারপতি জানালেন, সারা দেশের বিচার বিভাগকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।সিলেটে আদালতের ডিজিটালাইজেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ডিজিটালাইজেশন করা হবে। ডিসপ্লেতে সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক সবকিছু দেখা যাবে। কোথাও ভুল হলে আইনজীবীরা সেটা সংশোধন করে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে আমূল পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০১৪ সালের থেকে ৫০ ভাগ মামলা বেশি নিষ্পত্তি হবে।

দেশে ৩১ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, কিছু মহল থেকে বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ ৩১ লক্ষ মামলার ভার নিতে পারছেনা। আমি বলি, ৩১ লক্ষ মামলা খুব বেশি নয়। ভারতে এর চেয়েও বেশি মামলা আছে। কিন্তু ভারতে যে পরিমাণ বিচারক আছে বাংলাদেশে তার অর্ধেক। পৃথিবীতে সবচেয়ে কম বিচারক আছে বাংলাদেশে। প্রধান বিচারপতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদালতে ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০০, ২০০১ সালের অর্থাৎ ১৫-২০ বছর আগের যেসব মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইনজীবীদের সহযোগিতা চান। আমাদের আরও বড় সমস্যা হচ্ছে আদালত নেই। বিচারকদের বসার জায়গা দিতে পারছিনা। যদি পর্যাপ্ত আদালত থাকত তাহলে বর্তমান বিচারক দিয়েই ৩১ লক্ষ মামলা দুই-তিন বছরে নিষ্পত্তি করতে পারতাম। বলেন প্রধান বিচারপতি। আইনের শাসন নিশ্চিত করা বিচারকদের একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিডিয়া এবং সমাজের কিছু বুদ্ধিজীবী বলেন, বিচারকরাই শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা সত্য নয়। বিচারকের কাজ হচ্ছে সময়মত এজলাসে বসা, যত তাড়াতাড়ি মামলা নিষ্পত্তি করে রায় দেয়া, দ্রুত রায়ের সার্টিফাইড কপি দেয়া। তবে আইনজীবীরা হলে আইনের শাসনের কারিগর। তারা মামলার সাক্ষী এনে মামলা গড়ে দেন। সেটা পর্যবেক্ষণ করে বিচারকরা রায় দেন। আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। চট্টগ্রামে অতিরিক্ত জজের ছয়টি শূন্য পদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটিতে দ্রুত নিয়োগ দেয়ারও প্রতিশ্র“তি দেন প্রধান বিচারক। এছাড়া চট্টগ্রাম আদালতে বিচারক সংকট কাটাতে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন। এর আগে সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছান প্রধান বিচারপতি। এরপর তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুাল এবং জেলা ও মহানগর জজশিপের অধীন বিভিন্ন আদালতের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।