10329666_876981852326779_864930018765482076_o

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ৩ নভেম্বর ২০১৫: আধিপত্যের সংঘর্ষের কারণে কমিটি বিলুপ্ত করে এক বছর পর নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েও সামলানো যাচ্ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগকে৷ সর্বশেষ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ৷ এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন৷চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনা তদন্তেমঙ্গলবার কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ তিন সদস্যের এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷ ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সোমবার এই সংঘর্ষ হয়৷সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সংগঠনটির ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ৷ মঙ্গলবার দুপুরে হাটহাজারী থানার তিন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা তিনটি করেন৷ আসামিদের মধ্যে ৩৮ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন৷তিন মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া নতুন দুই নেতা বলছেন, সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী শিবির এবং জুনিয়রদের ভুল বোঝাবুঝি এই অস্থিরতার কারণ৷চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এই সংগঠনের কার্যক্রম গত কয়েক বছর ধরেই শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক আধা ডজন গ্রুেেপর দলাদলিতে বিপর্যস্ত৷ এদের কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের প্রাণও দিতে হয়েছে৷এর আগেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে সভাপতি আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাবি্ব সুজনের অনুসারীরা৷ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি তারা পালন করে আসছেন আলাদাভাবে৷

গত ২৫ অগাস্ট সোহরাওয়ার্দী হলের কক্ষ ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা৷ সে সময়ও পুলিশসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে সাতজন আহত হন৷২০১৪ সালের ১০ জুন শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক দল ‘কনকর্ড’ ও ‘ভার্সিটি এঙ্প্রেস (ভিএঙ্)’ এর কর্মীদের সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১৯ সদস্যের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি৷মামুনুল হককে সভাপতি এবং এস এম খালেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১১ সালের ২৫ জুন ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়৷এক বছর কমিটিহীন থাকার পর চলতি বছরের ১৯ জুলাই টিপুকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ও সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়৷ এরপর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি৷মাঝের এক বছর কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল আর সংঘর্ষ থেমে থাকেনি৷ এ কারণে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরে এসে দলের প্রভাবশালী দুই নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সংকট নিরসনের দায়িত্ব দেন৷ এরপর ১৫ নভেম্বর রাতে মহিউদ্দিনের বাসায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবদমান পক্ষগুলোর নেতারা বসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে’র প্রতিশ্রুতি দেন৷এক মাস পার না হতেই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দল ভিএঙ্ ও সিএফসি’র সংঘর্ষে প্রাণ হারান সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার৷এরপর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভিএঙ্ ও সিএফসির নতুন সংঘর্ষে আহত হন অন্তত পাঁচজন৷গত ১২ মার্চ সভাপতি আলমগীর টিপুর সমর্থক ‘সিঙ্টি নাইন’ গ্রুপর কর্মীরা ক্যাম্পাসে মারধর করে চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পিযুষ কান্তি বর্মনকে৷

সিটি নির্বাচনের দুই দিন পর ৩০ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিয়াজ ইরফান চৌধুরীর সমর্থক বাংলার মুখ ও সিঙ্টি নাইন৷ এতে আহত হন কমপক্ষে আটজন৷৬ জুন কনকর্ড ও বগিভিত্তিক আরেকটি গ্রুপ একাকার এর কর্মীদের সংঘর্ষেও আটজন আহত হন৷সংগঠনের এ দশার কথা বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও স্বীকার করেছেন৷সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন,দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস ছিল ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে৷ আমাদের সংগঠনেও কিছু ‘শিবিরের এজেন্ট’ ঢুকে গেছে৷ তারাই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে৷এর সঙ্গে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকাকে দায়ী করে সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাবি্ব সুজন বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷এ ধরনের ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে৷তবে কোন্দল নেই দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের সমস্যা নেই৷ জুনিয়রদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে৷চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনা তদন্তেমঙ্গলবার কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ তিন সদস্যের এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷ ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে গতকাল সোমবার এই সংঘর্ষ হয়৷সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সংগঠনটির ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত অনেককে আসামি করে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ৷ দুপুরে হাটহাজারী থানার তিন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা তিনটি করেন৷ আসামিদের মধ্যে ৩৮ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন৷

সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে তাঁর সভাকক্ষে এক সভা হয়৷ সভায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘষের্র ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়৷ পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, পরস্পরকে আঘাত করে আহত করা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়৷সভায় সহকারী প্রক্টর হেলাল উদ্দিন আহমদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ শহিদুল আলম ও মিজানুর রহমান৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়৷হাটহাজারী থানার পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এসআই মঞ্জুর আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন৷ এ মামলায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০০-১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ এ ছাড়া শাহজালাল আবাসিক হল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন এসআই স্বপন কুমার৷ শাহ আমানত আবাসিক হল থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন এসআই হাবিবুর রহমান৷হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাইল লেন, তিনটি মামলায় ৩৮ জন গ্রেপ্তার আছেন৷ অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে৷