doinikbarta

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ নভেম্বর ২০১৫: হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আত্মসমর্পণ করার পর জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত৷পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় ফখরুলের জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন মঙ্গলবার এই আদেশ দেন৷জামিন নাকচ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন৷ পরে ফখরুলকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে৷ প্রস্তুতি শেষে বিকেল সোয়া পাঁচটায় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মির্জা ফখরুলকে৷মঙ্গলবার তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন৷শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন জামিনের আবেদন নাকচ করে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন৷ জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মির্জা ফখরুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবাহ প্রমুখ৷

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সানাউল্লহ মিয়া বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের অভিযোগে পল্টন থানার তিনটি মামলায় বেলা আড়াইটার দিকে মির্জা ফখরুল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন৷ আদালত তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে ফখরুলের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের শুনানি হয়৷ কিন্তু আদালত তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়াননি৷ এতে তিনি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন৷১৩ জুলাই শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে মির্জা ফখরুলকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন ছয় সপ্তাহের জন্য বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷ পরে দুই দফায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ান আদালত৷চলতি বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারির একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট৷ এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা ঘটে৷ ৬ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ পরে নাশকতার অভিযোগে পল্টন ও মতিঝিল থানার সাতটি মামলায় তাঁকে ড়েগ্রপ্তার দেখানো হয়৷ এর মধ্যে পল্টন থানার মামলা ছয়টি ও মতিঝিল থানার একটি৷ সব মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন৷১৪ জুলাই তিনি জামিনে মুক্তি পান৷ এরপর তিনি চিকিত্‍সার জন্য বিদেশে যান৷ দেশে ফেরেন সেপ্টেম্বরে৷নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাত মামলায় ছয় মাস কারাগারে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল৷ স্বাস্থ্যগত কারণে আপিল বিভাগ অন্তবরতর্ীকালীন জামিন দিলে গত জুলাই মাসে মুক্তি পান তিনি; এরপর চিকিত্‍সা করাতে বিদেশে যান৷ বিদেশ থেকে ফেরার পর ফখরুলের আবেদনে তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ আত্মসমর্পণের আগে তিনি তিন মামলায় আরও সময় চাইলে গত সোমবার সে আবেদন নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগ৷

মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবারের মধ্যে ফখরুলকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়৷ সে অনুযায়ী বিকালে তিনি হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিন মামলায় জামিনের আবেদন করেন৷

এর আগে সোমবার আত্মসমর্পণের জন্য আরও সময় চেয়ে করা মির্জা ফখরুলের আবেদন নামঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ৷ ফলে মঙ্গলবারের মধ্যে তার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের বাধ্যবাধকতা ছিল৷তবে, এ তিন মামলার জামিন আবেদনে হাইকোর্টের জারি করা রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে আদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত৷গত ২১ জুন ওই তিন মামলায় ফখরুলকে জামিন দিয়ে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন বিচারপতি মো. রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ৷ তার স্থায়ী জামিন প্রশ্নে রুলও জারি করেন আদালত৷ গত ২৯ জুন জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ৷ পরে সেটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত৷গত ১৩ জুলাই এ তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ বহাল রেখে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ৷ এর আগে গত ২৮ জুন পল্টন থানার দু’টি ও মতিঝিল থানার একটিসহ নাশকতার অপর তিন মামলায়ও হাইকোটের্র জামিন আপিল বিভাগ বহাল রাখেন৷ ফলে সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় কারাবন্দি ফখরুলের জামিনে মুক্তি পেতে সব বাধা দূর হয়৷এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে উন্নত চিকিত্‍সার জন্য বিদেশে চলে যান ফখরুল৷ দেশে ফিরে আবেদন জানিয়ে আত্মসমর্পণের মেয়াদ দু’দফা বাড়িয়ে নেন তিনি, যা শেষ হয়েছে ২ নভেম্বর৷নাশকতার কাজে উস্কানি, প্ররোচনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় হরতালের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গত ৪ ও ৬ জানুয়ারি এসব মামলা দায়ের করে ওই দুই থানা পুলিশ৷এর আগে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷