ballo

দৈনিকবার্তা-ভোলা, ০৪ নভেম্বর ২০১৫:  চরফ্যাশনে প্রতিনিয়ত বাল্য বিয়ের প্রবনতা বেড়েই চলেছে৷ কাজীদের বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়টি এখন জমজমাট হয়ে উঠেছেন৷ উপজেলার পৌরশহর সহ ২২টি ইউনিয়নের স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় হতাশায় ভুগছে শিৰা পতিষ্ঠানের প্রধানরা৷ গত কয়েক মাসে এই উপজেলায় অনত্মত্য শতাধিক বাল্য বিবাহ সমপন্ন করা হয়েছে৷ আইন প্রয়োগ কারীসংস্থার কর্মকতর্া ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়ও এসকল বিয়ে হচ্ছে৷ এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে এক মাদ্রসার সুপার কাজীদের বিরম্নদ্ধে চরফ্যাশন প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ ও থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রসা সুপার লিখিত অভিযোগে বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী নাজমা বেগম (১২), ৯ম শ্রেণীর জান্নাত (১৪), দশম শ্রেণীর ছাত্রী রেশমা (১৫), অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মিথু বেগম (১২), আরেক ছাত্রী লাভলী বেগম (১২) সহ প্রায় ৩০ জন ছাত্রীর বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করেছে৷ এ ছাড়া গত বছর সাজেদা, ইয়াসমিন, আরজু, রম্নমা, রহিমা, শারমিন, ফাতেমা, খাদিজা রম্নবিনা ও চর আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ আইচা রাব্বানিয়া আলিম মাদ্রাসার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সহ প্রায় অর্ধশত ছাত্রী বাল্য বিয়ের কবলে পড়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করেছে বলেও মাদ্রসার পক্ষ থেকে অভিযোগ করেন৷ এসকল বাল্য বিয়ের ফলে উপজেলার পৌরশহর সহ ২২টি ইউনিয়নের অধিকাংশ স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা হতাশা ভুগছেন৷ এলাকা সূত্রে জানা গেছে, শশীভূষণ হোসাইনিয়া মাদ্রাসার সুপার মাওঃ ফারম্নক কাগজ পত্রে কাজী না হয়ে দক্ষিণ আইচা থানা এলাকায় নিজেকে ওলামালীগের প্রভাব খাটিয়ে কাজী হিসেবে জাহিরত করে সকল প্রকার বিয়ে সম্পন্ন করেন৷ তিনি মোটা অংকের উত্‍কোচ গ্রহণ করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কাগজ পত্রের তোয়াক্কা না করে অসংখ্য বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে আসছেন ৷ এলকাবসী আরো বলেন, সুপার ফারম্নক কিছু কিছু বাল্য বিয়ে রেজিস্ট্রারী না করেও বিয়ে সম্পন্ন করেন৷ অথচ অভিভাবকদেরকে খসড়া কাগজে সই স্বাক্ষর নিয়ে রেজিস্ট্রারী হয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে সরকারি ফির চেয়েও কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন ৷

গত ২ নভেম্বর সোমবার রাতে চরমানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া এলাকার নীলিমা জ্যাকব বিদ্যালয়ের জেএসসি পরিক্ষাথর্ীর রসুলপুর এলাকার যুবকের সাথে দক্ষিণ আইচার কাজী অফিসে রাইটার সুপার ফারম্নক বিয়ে ও কাবিন সম্পন্ন করেন৷ এসময় দৰিণ আইচা থানার এস আই আনোয়ার ও মকবুল হোসেন হাতে নাতে ফারম্নককে আটক করে৷ পরে প্রভাবশালীদের সুপারিশে তাদেরকে ছেড়েদিতে বাধ্য হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহ আলম ৷ এব্যাপারে ভোলা পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরম্নজ্জামানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতর্া জেল জরিমানা করার এখতিয়ার রাখেন, পুলিশ সকল কাজ করতে পারেনা৷ কাজীর রাইটারকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া পুলিশের কোন উপায় ছিলনা৷

এ ছাড়া কিছু দিন আগে বিয়ের দাবীতে শওকত আরা বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী রেখা (১৪) প্রেমিক মোসত্মাফিজের চরকচ্ছপিয়া গ্রামের বাড়ীতে অবস্থান নিলে চরমানিকা ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কবির নেগাবান ও দক্ষিণ আইচা থানার ইনচার্জ আব্দুর রবের সহযোগিতায় উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ এ ব্যাপারে মোসত্মাফিজের বাবা আনিছল হক দক্ষিণ আইচা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছে৷

অপরদিকে দক্ষিণ আইচা হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী ছকিনা (১৪) এর সাথে ফিরোজের বিয়ে ও শওকত আরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর আরেক ছাত্রীকে কলেজ ছাত্রী দেখিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করে কাবিন নামা রেজিস্ট্রারী করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক৷ তিনি আরো বলেন, গত কয়েক মাসে তার বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীর বাল্য বিয়ের কবলে পরেছেন৷ এ অঞ্চলে গত ১ মাসে বাল্য বিয়ের প্রবনতা রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন বিদ্যালয়ও মাদ্রসার সুপারগণ৷

বাল্য বিয়ে কাবিন নামা রেজিস্ট্রারী সমর্্পকে মাওলানা ফারম্নক বলেন, আমি মেয়ের জন্ম নিবন্ধন কার্ড ছাড়া কাবিন রেজিস্ট্রারী করিনা, তবে কন্যার পিতা আমাকে বলেছেন, তার মেয়ে কলেজে লেখাপড়া করে৷ কাবিন রেজিস্ট্রারী পর জানতে পারলাম সোনিয়া নবম শ্রেণীর ছাএী৷ তিনি কাজী কিনা জানতে চাইলে তিনি কাজী নয় স্বীকার করে বলেন, আমি কাজীর রাইটার্ তবে মাওলানা হিসেবে বিয়ে সম্পন্ন করি৷ বাল্য বিয়ে প্রসঙ্গে বলেন, জম্ম নিবন্ধন দেখে বিয়ের রেজিস্ট্রারী সম্পন্ন করা হয়৷

এব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহি অফিসার রেজাউল করিম বলেন, আমরা যখন বাল্য বিয়ের সংবাদ পেয়ে থাকি তত্‍খনিক গিয়ে বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করি৷ আগের তুলনায় এই উপজেলায় অনেক বাল্য বিয়ের সংখ্যা কমেছে৷আমারা অধিকাংশ বাল্য বিয়ের সংবাদ পেয়ে থাকি বিয়ের পরে৷ আর প্রনত্মাত্যঞ্চলের অনেক বিয়ের সংবাদ আমার কাছে আসে না৷ যে সকল কাজীরা এসকল বিয়ের সাথে জড়িত অভিযোগ পেলে তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি৷মাওলানা ফারম্নকের মত এই উপজেলায় প্রায় অর্ধশত কাজী ও কাজীর রাইটার রয়েছে যারা সব সময় অপাপ্তবয়স্কদের বয়স বাড়িয়ে বিয়ে সম্পন্ন করে থাকেন৷ এসকল কাজীদের বিরম্নদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন সচেতন মহল৷