shaka-1428323977_12898_5545

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ নভেম্বর ২০১৫: মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার সকালে চট্টগ্রামের রাউজানে সাকা চৌধুরীকে এবং ফরিদপুর শহরে মুজাহিদকে দাফন করা হয়।শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মানবতাবিরোধী এই দুই অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সাকা চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। মুজাহিদ ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।ফাঁসি কার্যকরের পর বাদবাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ২টা ৪৯ মিনিটে দুজনের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।মুজাহিদ : ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে আদর্শ একাডেমি পরিচালিত আইডিয়াল মাদ্রাসার মূল ফটকের কাছে সকাল সোয়া সাতটার দিকে মুজাহিদকে দাফন করা হয়। ফরিদপুরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা গেটের পাশে পারিবারিক জমিতে মুজাহিদকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে ওই মাদ্রাসা মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিবারের সদস্য ও দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় মুজাহিদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ফরিদপুরে পৌঁছায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজবাড়ী-ফরিদপুরের সীমান্ত এলাকা সাইনবোর্ড নামক স্থানে তাঁর লাশ গ্রহণ করেন। এরপর তাঁর লাশ আইডিয়াল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়।ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, মুজাহিদের জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা নির্বিঘেœ শেষ হলেও নিরাপত্তা-ব্যবস্থা বহাল আছে।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে সেই আলবদর বাহিনীর অন্যতম নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছরের ১৬ জুন সেই ফাঁসির সাজা বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন মুজাহিদ। ১৮ নভেম্বর ওই আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ (৬৮) বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন।

এর আগে সকাল ৬টা ৩৭ মিনিটে তার মরদেহ খাবাসপুর পৌঁছায়। প্রশাসনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ গ্রহণ করেন মুজাহিদেও ছোট ছেলে আলী আহসান মাবরুর। এরপর ৬টা ৫০ মিনিটে জানাজা সম্পন্ন হয়। তবে জানাজার সময় আশপাশে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী উপস্থিত থাকলেও কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যসহ স্বল্প সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নেন।জানাজা পড়ান মুজাহিদের বড় ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ।শনিবার দিনগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।২টা ৫৩ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।মরদেহবাহী গাড়িবহর সাভার-মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে নদী পেরিয়ে রাজবাড়ী হয়ে পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে পৌঁছায়।যাওয়ার পথে প্রতিটি জেলা ও থানার পুলিশ ওই গাড়িবহরকে রিসিভ করে জেলা সীমানা পার করে দেয়।

ফরিদপুর পৌঁছানোর পর মুজাহিদের পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে নামাজে জানাজা শেষে পশ্চিম খাবাসপুরের আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাফন সম্পন্ন হয়।একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, আটক ও নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যার মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুললেন মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে এটি ছিল ৬ নম্বর অভিযোগে।স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার চতুর্থ ফাঁসির রায় কার্যকর, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীর।

সাকা চৌধুরী : রাউজানের গহিরায় পৈতৃক বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সকাল ১০টার দিকে সাকা চৌধুরীকে দাফন করা হয়।রোববার সকালে রাউজানের গহিরা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশে সাকা চৌধুরীকে দাফন করার আগে স্থানীয় একটি মসজিদে তার জানাজা হয়।সাবেক মন্ত্রী ও ছয়বারের এমপি এই বিএনপি নেতার জানাজায় অংশ নেন শ’ খানেক মানুষ। ইমামতি করেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মহিবুল্লা বাবুনগরী। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বাড়ির মসজিদ প্রাঙ্গণে সাকা চৌধুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এতে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন।কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল নয়টার দিকে তাঁর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছায়।চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাকা চৌধুরীর জানাজা ও দাফনকে কেন্দ্র করে রাউজানে বাড়তি নিরাপত্তা-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়।মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

৩৩ মাসের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২৯ জুলাই ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সেই ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। তবে ১৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার ওই আবেদন খারিজ করে দেন।সাকা চৌধুরী (৬৭) মুসলিম লীগ থেকে রাজনীতি শুরু করেন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। স্বৈরশাসক এরশাদের সামরিক শাসনামলে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর রোববার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও একাত্তরের বদর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।এরপর রাত ২টা ৫৫ মিনিটে তাদের মৃতদেহ নিয়ে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরের পথে রওনা হয় অ্যাম্বুলেন্স।

পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ৯টার দিকে সাকা চৌধুরীদের বাড়ি বাইতুল বিলাল’- এ পৌঁছায় তার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। সাকার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মাজহারুল ইসলামের কাছ থেকে লাশ বুঝে নেন।াকার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও তাদের দুই ছেলে হুম্মাম ও ফাইয়াজ কাদের চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যরা লাশের গাড়ির আগে আগেই গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। প্রথমে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মূল ঘরে, যা এক সময় সাকার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘর ছিল। পরে বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় বকশ আলী চৌধুরী বাড়ি মসজিদে। সেখানে সোয়া ৯টার দিকে সাকার জানাজা হয়।চাচাতো ভাইরা সাকার জানাজায় থাকলেও আপন ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন অনুপস্থিত। আরেক ভাই জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী দাফনের সময় এলেও জানাজায় ছিলেন না, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। জানাজার পর সকালে ৯টা ৫৫ মিনিটে পারিবারিক কবরস্থানের সম্প্রসারিত অংশে দাফন করা হয় সাকা চৌধুরীকে।

পরে গ্রামের বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে সাকার ছেলে হুম্মাম বলেন, বাবার অবৈধ রায় কার্যকর করা হয়েছে। নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি। আজকাল বাংলাদেশে এতো গুমখুন হচ্ছেৃ আল্লাহর মেহেরবানিতে আমরা তাকে সম্মানের সাথে দাফন করতে পেরেছি।গত দুই দশকে চটকদার,ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং কখনো কখনো অশালীন মন্তব্যের কারণে বার বার সংবাদপত্রের শিরোনামে আসা সালাউদ্দিন কাদেরের জন্ম এই গহিরা গ্রামেই। বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী এক সময় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।সালাউদ্দিন কাদেরের রাজনীতির শুরুও মুসলিম লীগ থেকে। পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে তিনি বিএনপিতে আসেন।একাত্তরের অপরাধের জন্য বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ ১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে রাউজানের সাংসদ নির্বাচিত হন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং কার্যত এর মধ্যে দিয়েই মূল ধারার রাজনীতিতে তার পুনর্বাসন ঘটে।১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচন করে নিজের এলাকা রাউজান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সাকা। কিন্তু পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে তিনি নির্বাচন করেন নিজের গঠন করা দল এনডিপি থেকে। আবারও তিনি রাউজানের এমপি হন।এর কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকেটে সাংসদ নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও তিনি পালন করেন।এর আগে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ওগণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সা কা চৌধুরী।সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা। রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।সাকা সাংসদ থাকা অবস্থায় ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে তার ফাঁসির রায় আসে; আপিলেও তা বহাল থাকে।এই রাউজানেই কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ওঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তারছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে রোববার প্রথম প্রহরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার দুপুরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রাণভিক্ষার আবেদন করার কথা জানালে পরিবারের সদস্যরা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।সংবাদ সম্মেলন করে এ বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করেন তারা। এর প্রতিবিধান েেচয়ে সাকা চৌধুরীর ছেলে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন নিয়ে গেলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।

রাতে ফাঁসি কার্যকরের আগে কারাগারে সাকা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে হুম্মাম সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি কি মার্সি পিটিশন করেছ? তিনি বলেছেন, এরকম বাজে কথা কে বলেছে?”এ বিষয়টি নিয়ে দাফনের পরেও কথা বলেন সাকা চৌধুরীর ছেলে।আমাদের বারবার বলা হয়েছে- সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে। যাকে বাংলার মানুষ বাঘ হিসেবে চেনে তিনি মাথা নত করতে পারেন না। কাল যখন বাবার সাথে কথা হয়। তখন তিনি বলেন, তোমার ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা বাবা বাঘ, তিনি মাথা নত করতে পারে না।একদিন এর বিচার হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ এ রায় মেনে নেবে না।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে নানা সময়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করলেও শেষ পর্যন্ত দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষাকারী ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে শহীদ বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী। রবিবার সকাল ৯টার দিকে সাকার মরদেহ কড়া নিরাপত্তায় তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামে পৌঁছালে জানাজার নামাজের জন্য সেটি নিয়ে যাওয়া হয় তাদের দাদার বাড়ি লাল বিল্ডিংয়ে। সাকা চৌধুরীর নতুন বাড়ি বায়তুল বিলাল থেকে পুরনো বাড়িতে পায়ে হেঁটে মেয়ে ফারজিন কাদের ও পুত্রবধূ দীনিয়া খন্দকার সাথে নিয়ে সেখানে পৌঁছানোর সময় মেয়েকে উদ্দেশে করে সাকাপতœী এ কথা বলেন।

এ সময় ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেন, তোমরা একদম চোখের পানি ফেলবে না। কাঁদবে না। তোমার আব্বু শহীদ হয়েছে। এসব কথা বলে তিনি তাদের পারিবারিক মসজিদের আঙিনায় জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর সাকার মরদেহ যখন মসজিদের পাশের পারিবারিক নতুন কবরস্থানে দাফন করার জন্য নেয়া হয়, সে সময় পুকুরপাড়ে মেয়ে-পুত্রবধূ ও ননদকে নিয়ে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন ফরহাত কাদের।এ সময় সাকার মরদেহের দিকে তাকিয়ে সাকাপতœী বলেন, তার শরীর-চেহারায় গত কয়েকদিনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর আগে যেমন দেখে এসেছিলাম কালকেও সেরকম দেখলাম। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।

এরপর মা-মেয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সেখান থেকে বায়তুল বিলালে চলে যান। এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীসহ ৯টি গাড়ির বহর নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা দেন ফারহাত কাদের চৌধুরী। তারও আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী ও তার স্ত্রী দানিয়া খন্দকার একই গাড়িতে চড়ে ঢাকা থেকে গহিরায় আসেন। তবে গাড়ি থেকে নেমে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী নিকটাত্মীয়দের জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও একেবারেই নির্বাক ছিলেন সাকাপতœী ফারহাত কাদের চৌধুরী।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার তার পৈত্রিক বাড়িতে আসে। সেখানেই বায়তুল বিলালের পারিবারিক কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মাজহারুল ইসলামের কাছ থেকে সাকার মরদেহ বুঝে নেন তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। এর মিনিট দশেক পরে সাকার জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জানাজার নামাজ পড়ান।

এর আগে শনিবার রাত ৩টার পর থেকে সেখানে পুলিশ পাহারায় কবর খোঁড়া শুরু হয়। সাত থেকে আটক জন গোড়খোদক খননের কাজ করেন। তবে দাফনের আগে তার জানাজা নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে গহিরা কলেজ মাঠে জানাজা আয়োজন করতে চায় স্থানীয়রা। তবে প্রশাসনের বাধায় তা বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়েও পুলিশের সাথে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর মাঝে মিনিট দশেক ধরে দেনদরবার চলে। পরে তার বাড়ির পাশেই জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। সেখানে জানাজা সম্পন্ন শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মেজো ভাই সাইফুদ্দীন কাদের চৌধুরীর পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

এদিকে, যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মরদেহ প্রতিরোধে রাউজান উপজেলার প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মধ্যরাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিলেও পরে পুলিশের তৎপরতায় তারা সরে যায়। তবে জানাজায় অংশ নিতে লোকদের‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা দিয়েছে। তাদের হামলার শিকার হয়েছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক রিপোর্টারসহ আরো তিনজন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শনিবার রাত ২টা ৫৩ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি। এর আগে রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়।সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সাকার মরদেহ পরিবহণ অবাধ করতে রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী হয়ে রাউজান পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবি মোতায়ন করা হয়।