অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সর্বত্র যাতে সমভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে এজন্য সরকার সারাদেশে ১শ’ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে এবং ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে। এছাড়া যত্রতত্র শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে কৃষি জমি নষ্ট হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হলে পরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে।তিনি বলেন, সারাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।সরকারি দলের এস এম জগলুল হায়দারের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সব উপজেলায় একটিও সরকারি স্কুল বা কলেজ নেই শুধুমাত্র সেসব এলাকায় স্কুল বা কলেজ সরকারি করা হবে। তবে ওইসব স্কুল বা কলেজের শিক্ষকরা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বদলি হতে পারবেন না। তাদেরকে ওই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বড় প্রকল্প গ্রহণ করার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। সুতরাং পদ্মা সেতুর কারণে অন্য কোন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমানের এক সম্পূূরক প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ পর্যন্ত যত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার সব ক’টি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এর কোনটি বান্তবায়নাধীন রয়েছে আবার কোনটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থের কোন সমস্যা হয়নি।শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং জনগণের অর্থের যাতে সঠিক প্রয়োগ হয়, এ বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।তিনি বলেন, কারও সাহায্য ছাড়াই বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত টাকায় পদ্মাসেতু হচ্ছে। সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ বাংলার মানুষের সাথে সারাদেশের মানুষের যোগাযোগ সহজ করা এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার লক্ষ্যে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পে ব্যয় হবে মোট ২৮ হাজার ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।তিনি বলেন, প্রকল্প ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত অর্থ, কারো আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা এতে নেই। এর প্রতিটি রড, ইট, পাথর, সিমেন্ট আমাদের জনগণের টাকায় কেনা। জনগণের আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হচ্ছে, পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণ। পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংকের আনীত অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে কথিত দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়।

স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা ও বিশদ ডিজাইনের জন্য ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমীক্ষা প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে।তিনি বলেন, বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দিয়ে একই সময় গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করবে। সেতুটি হবে দোতলা, এর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন এবং উপর দিয়ে চলবে গাড়ি। পদ্মা সেতুতে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল শুরুর দিন থেকে রেল চলাচলের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প এবং ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল রুটে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা সম্পন্ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।তিনি সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদের নাজমুল হক প্রধানের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতার পরিমাণ ৯শ’ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ২ লাখে উন্নীত করা হয়েছে এবং গত জানুয়ারি থেকে মাসিক সম্মানি ভাতা ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গত জানুয়ারি মাস থেকে মাসিক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকায়, বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায়, বীর উত্তম খেতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ১০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায় এবং বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের ১২ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করার বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ৯ হাজার ৭শ’ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা হারে প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এই ভাতার হার সর্বনিম্ন ২২ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টাকায় বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন সময়ের সংগ্রাম-আন্দোলনের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ঘটনা ও মুক্তিযুদ্ধের সচিত্র ইতিহাস ও দলিল পত্রাদির ১৪৪টি গ্লাস প্যানেলে মুদ্রণ করে ভূ-গর্ভস্থ জাদুঘর সজ্জিতকরণের কাজ করা হয়েছে। জাদুঘরে লাইটিং, সাউন্ড সিস্টেম ও মাল্টিমিডিয়া শো স্থাপনসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধির রেপ্লিকা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি আরো আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নতুন ও আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য আগারগাঁওয়ে ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ বর্তমানে সমাপ্তির পথে রয়েছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রবাহ মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মেধবাী সন্তান ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লেখাপড়ায় সহায়তা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি’ চালু করেছে। তাছাড়া ২০১২ সালে চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীগণের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।তিনি বলেন, তবে সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বর্তমান সরকারের আমলেই গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের ক্ষেত্রে ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।