শহীদ মিনারের পাশে অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে ৭২ ঘণ্টা

কবর ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে থাকা অন্যান্য সব অবৈধ স্থাপনা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) এ রায় দেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় এমন রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরাতে বলা হয়েছে আদালতের রায়ে। তবে কবরটি ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।

২০১২ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি বেড়ে উঠছে কথিত মাজার/হুমকিতে শহীদ মিনার’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রতিবেদন যুক্ত করে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ওই বছরের ২২ ফেব্র“য়ারি হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওইদিন হাই কোর্ট রুল জারি করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জমি রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিসহ বিবাদীদের র“লের জবাব দিতে বলা হয়।রুলের সঙ্গে দেওয়া অন্তবর্তীকালীন আদেশে কবর ঠিক রেখে মাজারের অবৈধ স্থাপনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ২৫ ফেব্র“য়ারি গণপূর্ত বিভাগ ওই মাজারের খাদেমের বসার জায়গা, অজুখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে দেয়।সে সময় কিছু স্থাপনা ভাঙার পর মূল মাজারে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেসব এখনো সেভাবেই আছে। বিষয়টি আদালতে গড়ানোর চার বছর পর রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিল আদালত।

রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কবরটি ছাড়া অবৈধ সব স্থাপনা ভেঙে অপসারণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। কবরটি মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় আদালত এ রায় দিয়েছে।২০১২ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘বেড়ে উঠছে কথিত মাজার/হুমকিতে শহীদ মিনার’ শীর্ষক প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়- কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে কখনো কোনো মাজার ছিলো না। ছিলো সাধারণ একটা কবর। এই কবরটি ঢাকা মেডিকেলের কোনো এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর। পরে সেই কবরটিকেই ধীরে ধীরে মাজার বানিয়ে নিয়েছে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য আশপাশের যে চার একর জায়গা বরাদ্দ আছে, সেখান থেকে কথিত মাজারের নামে দখল নেওয়া হয়েছে ওই ২০ কাঠা জমি। ইতোমধ্যে দখলকৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। মাজার ব্যবসায়ীরা এখন কথিত পীরের কবরের ওপর গম্বুজ ও কবরের পাশে কমপ্লেক্স নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিস্মারক ও বাঙালি চেতনার প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

এই প্রতিবেদন যুক্ত করে শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ওই বছরের ২২ ফেব্র“য়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করে।