28-05-16-PM_Japan-4

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।শনিবার সকালে জাপানের নাগোয়ায় শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় শেখ হাসিনার। শিনঝো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেখ হাসিনারজাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন প্রধানমন্ত্রীদ্বয়।শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর নাগোয়ার মারিওট অ্যাসোসিয়া হোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথিপালা সিরিসেনারও সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। ওই সাক্ষাৎ হয় প্রধানমন্ত্রীর নাগোয়ার আবাসস্থল হোটেল হিলটনে। এতেও অংশ নেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।এই দুই বৈঠকের পর দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা ট্রেনযোগে পৌঁছেছেন রাজধানী টোকিওতে। এখানে তারা উঠেছেন ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে।এই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই শেষ হবে প্রধানমন্ত্রীর শনিবারের ব্যস্ততা। তারপর তিনি ফিরবেন টোকিওর আবাসস্থল মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে।পরে বিকালে টোকিওতে বাংলাদেশের নতুন ও নিজস্ব দূতাবাস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বিক উন্নয়নে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে শিনজো আবে কথা দিয়েছেন। আমরাও উন্নয়নের আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।আমি মনে করি, বাংলাদেশও জাপানের মধ্যে এই সহযোগিতার সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো গভীর হবে।নতুন দূতাবাস ভবন উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, এই দিনটি সত্যি একটা আনন্দের দিন। সত্যিই আমাদের একটা ঠিকানা হল। পুরোটাই আমাদের বাংলাদেশ মনে হচ্ছে।অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, যিনি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সঙ্গীদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। শেখ রেহানাকে জোর করে জাপান নিয়ে গেছেন জানিয়ে হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম জাপান সফরে ‘দুদেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব রচিত হয়েছিল, তার একজন এখানে আছে।ও না আসলে এটা অধরাই হয়ে থাকত। ছোট মেয়ে রেহানার সঙ্গে ছোট ছেলে শেখ রাসেলও বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের সঙ্গীদের মধ্যে ছিল।৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে শিশু রাসেলকেও হত্যা করে একদল সেনা সদস্য।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জাপানের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা চরম বিপদে পাশে ছিল, তাদের কথা ভুলে যাওয়ার নয়।বঙ্গবন্ধু সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণে জাপানের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই বন্ধুত্ব ভুলে যাওয়ার জন্য নয়।

জি- সেভেন আউটরিচ মিটিং সফল হয়েছে মন্তব্য করে সেখানে আমন্ত্রণ জানানোয় শিনজো আবেকে ধন্যবাদ জানান তিনি।বক্তব্যে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, আগামী বাজেট বিশাল আকারের হবে। এত বড় বাজেট আগে কখনো দেওয়া হয় নাই। এই সক্ষমতাও আমরা অর্জন করেছি।বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে মন্তব্য করে তা ধরে রাখতে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদেও প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অত্যাধুনিক নকশার নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাপানে এটাই বাংলাদেশ।শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় এ ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। ৭১৪ স্কয়ার মিটারের ওপর অত্যাধুনিক নকশায় চারতলা বিশিষ্ট চ্যান্সারি ভবনটি নির্মাণ করেছে জাপানেরই মোরামোতো কর্পোরেশন’। এর পরামর্শক ছিল কে পার্টনার্স আর্কিটেক্ট’।প্রধানমন্ত্রী এ দু’টি প্রতিষ্ঠান ও জাপানসহ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণে সহযোগিতার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাপানে এটাই বাংলাদেশ। এই সুন্দর ভবনটি হবে জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের প্রতীক।

তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় রয়েছে।এটা আরও দৃঢ়তর হবে।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে যাওয়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মাধ্যমেও দু’দেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সংহত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপান আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে জাপানের সহযোগিতার কথা বাংলাদেশ চিরকাল স্মরণ করবে।জাপানকে অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আমাদের সংকটকালে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের কথা আমরা কোনোদিনই ভুলে যেতে পারি না।বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, রূপসা সেতু নির্মাণ জাপানের সহযোগিতায় হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়নেও জাপান প্রথম এগিয়ে আসে, পরে বিভিন্ন জটিলতার কারণে কারও সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু করছে।এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণ করেন, বাংলাদেশে যখন কোনো একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল না, তখন হোটেল সোনারগাঁও তৈরি করে দিতে জাপানই এগিয়ে আসে।বর্তমানে মাতারবাড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পেও জাপান অর্থায়ন করছে উল্লেখ করে তা-ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।