অর্থমন্ত্রীর হাতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন, ২০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশরিজার্ভের টাকা চুরির বিষয়ে তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন। সোমবার (৩০ মে) দুপুর সোয়া ২টার দিকে প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তিনি।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং সদস্য সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোমবার (৩০ মে) দুপুরে সচিবালয়ে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান। মুহিত বলেন, প্রাথমিক রিপোর্ট একমাস ও ফাইনাল রিপোর্ট তিনমাসের মধ্যেই হলো। দ্যাট ইজ ইউনিক এবাউট দিস রিপোর্ট। ইটস এ ভেরি ইমপরটেন্ট রিপোর্ট। কেননা এটার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সংস্কার। আমাদের অনেক ল্যাকিংস আছে, অনেক দোষ আছে, সেগুলো দেখানোই আসল উদ্দেশ্য। টাকা আদায়ের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা তো অন্যখানে আছে। এজন্য তদন্ত চলছে। টাকা আদায়ের বিষয় এটি নয়। এটি হচ্ছে টাকাটা কেন চলে গেলো তা বের করা। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্যই প্রস্তুতি। তবে এখন দেখা যাচ্ছে সারাবিশ্বেই এ রকম কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, শুধু দেশের নয়, সব দেশের সাংবাদিকরাই আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই করেছেন। এখন কিছু বলবো না। ইট উইল বি পাবলিশড। আমি এটি পড়ে দেখি আগে। ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে যা কিছু আছে তাই প্রকাশ পাবে। শাস্তির সুপারিশ যদি থাকে বাস্তবায়ন করা হবে কিনা জানতে চাইলে মুহিত বলেন, যা কিছু থাকবে তাই প্রকাশ করা হবে।

এ সময় ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ৭৫তম দিনেই আমরা প্রকাশ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক ধন্যবাদ। তারা সব রকমের সহায়তা দিয়েছেন। ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, গকুল চাঁদ দাস আর আমি মিলে রিপোর্টটি করেছি। অন্তবর্তী রিপোর্ট সেটার সঙ্গে এটির বলতে গেলে কিছুই মিল নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একদমই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ৯০ শতাংশই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফরাসউদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি কারা দায়ী। কে কোন উদ্দেশে কাজটা করেছে। আমাদের পক্ষে বাইরের কোনো সাইবার ক্রিমিনালরা জড়িত তা নির্ধারণ করা সম্ভব ছিল না। আমাদের কর্মপরিধিতেও সেটি ছিল না। কীভাবে টাকাটা কতটুকু আদায় করা সম্ভব আমরা একটা আশাব্যঞ্জক চিত্র দিয়েছি।

অন্তবর্তী এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ৯০ শতাংশই পার্থক্য কারণ জানতে চাইলে ফরাসউদ্দিন বলেন, আগেরটা তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিল। সে প্রতিবেদন পড়ে আমাদের বুয়েটের তিনজন শিক্ষক অসাধারণ কাজ করেছেন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা যে লাইনে যেতে চেয়েছিলাম তারা আমাদের নানা রকম তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। সেই ভিত্তিতেই পরিবর্তন হয়েছে। কোনো চাপ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো সময় চাপ অনুভব করি না। এক্ষত্রেও কোনো রকমের চাপ ছিল না।

আগের রিপোর্টে সুইফটকে দায়ী করার বিষয়ে বলেন, আগে যে দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করেছিলাম তার চেয়ে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। আগে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখন পরিবর্তনে এটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ধরনের তা রিপোর্টের মধ্যে আছে। পুরো রিপোর্ট প্রকাশ পেলেই তা জানতে পারবেন।

‘সুইফটেরও দায় দায়িত্ব আছে। তারা পূর্ণ দায়ী কিনা, মূল দায়ী কিনা সেটারও বিশ্লেষণ এখানে আছে। কিন্তু এটিও সত্যি সুইফট কখনও তার দায় এড়াতে পারে না। সুইফটের সাহায্য নিয়েই আমরা ভবিষ্যতের সমস্যা সমাধান করতে পারবো’। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ উপস্থিত ছিলেন। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ড, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ৩০ দিন পর অন্তবর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। ৭৫ দিন পর সোমবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলেন তারা।