02-06-16-PM_Finance Minister_Parliament-10

ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে পরিকল্পনায় রেখে আসন্ন অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রধান প্রতিবন্ধক অনিশ্চিত স্থানীয় শাসনব্যবস্থা। ঘনবসতির স্বল্প আয়তনের এই দেশে ক্ষমতার প্রতিসংক্রম ছাড়া কোনো উন্নয়ন উদ্যোগ গতিশীলতা পাবে না, যাতে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তাই স্থানীয় শাসনব্যবস্থার গুণগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের সময় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী ২০১৬-১৭ সালের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা জনসংখ্যায় ও আয়তনে বিশ্বের প্রায় ৫০৬০টি দেশের চেয়ে বড়। এ শাসনব্যবস্থায় স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব ও ক্ষমতা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব সংগ্রহ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রেখেও স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব ও ক্ষমতার সুস্পষ্ট বিভাজন অতি সহজেই নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যার বাস্তবায়ন অচিরেই শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, আমি স্পষ্টভাবে ক্ষমতা ও দায়িত্বের প্রতিসংক্রমের কথা বলছি, বিকেন্দ্রীকরণের কথা নয়।আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অন্যতম লক্ষ্য ছিল জেলা সরকার প্রতিষ্ঠা, যা তাঁর জীবনে কার্যকর হতে পারেনি। গণতান্ত্রিক জেলা সরকারের ধারণা এখন সুস্পষ্ট। স্থানীয় শাসনব্যবস্থার সংস্কারই জেলা সরকার সহজেই প্রতিষ্ঠা করতে পারে।অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধির গতিকে সুসংহত ও ত্বরান্বিত করার সময় হচ্ছে এখনই। অপর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সমস্যা মোকাবিলায় উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনই হবে প্রধান হাতিয়ার।

প্রস্তাবিত বাজেটের এই ব্যয় বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি।বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের এ মেয়াদের তৃতীয় এই বাজেট উপস্থাপনা শুরু হয় দেশের অর্থনীতিতে গত সাত বছরের সাফল্যের একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। এবার মূল বাজেটের যে আকার মুহিত ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির (১৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭ কোটি টাকা) ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।অর্থাৎ, টাকার অংকে বাজেটের আকার বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে গতবারের প্রায় সমান তালেই অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার এই বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা; যার এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)।আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।

এই অনুন্নয়ন ব্যয়ের বড় একটি অংশ যাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশনে। এর সঙ্গে বিদেশি ঋণের পুঞ্জীভূত সুদ মেটানোর দায়ও রয়েছে।টানা আটবার এবং ব্যক্তিগত ১০টি বাজেট দেওয়া মুহিত বিশাল এই ব্যয়ের ৭১ শতাংশের বেশি অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মুহিত।এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৬৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।আয়কর ও মুনাফার উপর কর থেকে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ২২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৩০ হাজার ৭৫ টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৪৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় নামানো হয়।অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।অবশ্য ঘাটতির এই পরিমাণও মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকছে, যা অর্থনীতির বিবেচনায় সহনীয় বলে ধরা হয়।