ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সভাপতি সুলতানা কামাল

রাষ্ট্র কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সভাপতি সুলতানা কামাল। তিনি বলেছেন, সুশাসনের অভাব থাকলে পদে পদে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটতে থাকে।শনিবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’ নামের একটি উদ্যোগের আত্মপ্রকাশ নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি হয়।সুলতানা কামাল বলেন, মানুষ আমাদের বলছে, ক্রসফায়ার হওয়ার পরে আপনারা কথা বলছেন কেন? যাদের ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে, তারা অন্যের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অতএব তাদের মানবাধিকার নেই। এই যে একটা বোধ সমাজে চলে আসে, যেনতেনভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবেÑএটা কোনো আধুনিক, গণতান্ত্রিক, সুশাসনসম্পন্ন রাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়।সুশাসনের অভাবের একপর্যায়ে সমাজে হতাশা তৈরি হয় উল্লেখ করে সুলতানা কামাল আরও বলেন, হতাশা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাষ্ট্র নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। কোনো সমস্যা সমাধান করতে গেলে ছোটখাটো পথ খুঁজছে। অন্যদিকে মানুষ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে, ফতোয়ার মাধ্যমে অমানবিক কার্যক্রমকে সমর্থন দিচ্ছে।টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে গঠিত একটি মঞ্চ। এটি জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করবে। এর আহ্বায়ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

উন্নয়নের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।শনিবার আত্মপ্রকাশ করা এই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সমন্বয়কের দুটি পদেই রয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) দুই কর্মকর্তা দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য ও আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।নাগরিক সমাজ থেকে আট ব্যক্তিকে নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মের ‘কোর গ্র“প’ করা হয়েছে। ১৩ জনকে নিয়ে করা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।কোর গ্র“পে থাকছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহীন আনাম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মেট্রোপলিটান চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, মোস্তাক রাজা চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

উপদেষ্টা পরিষদে থাকছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ফজলে হাসান আবেদ, জামিলুর রেজা চৌধুরী, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, ড. হামিদা হোসেন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, মুস্তফা মনোয়ার, রোকেয়া আফজাল রহমান, রাজা দেবাশীষ রায়, শ্রীমতি সাহা, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ও শাইখ সিরাজ।এছাড়া ২৬টি বেসরকারি সংস্থা এ প্ল্যাটফর্মে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে, যার সচিবালয় হবে সিপিডি।

এর মধ্যে রয়েছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ার অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, কেয়ার বাংলাদেশ, নিজেরা করি, অক্সফাম বাংলাদেশ।রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশে সুশাসন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করবে এ প্ল্যাটফর্ম।এ প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য হল এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও মাত্রা পর্যবেক্ষণ, চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের সচেতন করা, যাতে বিনিয়োগ করা অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়। এছাড়া বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময়সহ সার্বিক সমন্বয় করতে সহযোগিতা করবে এই প্ল্যাটফর্ম।এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের একজন মানুষও যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তা মনিটরিং করার উদ্দেশ্যে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হচ্ছে, বলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, দেশে যে সুশাসনের অভাব রয়েছে, তা তুলে ধরার জন্য এই প্ল্যাটফর্ম একটি বড় সুযোগ।সুশাসনের অভাবে দেশে দুর্নীতি বাড়ায় আর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ায় নাগরিক মৌলিক অধিকার সঙ্কুচিত হয়। এ অবস্থায় রাষ্ট্র ও জনগণ এক সাথে কাজ করতে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে।শাহীন আনাম, আসিফ ইব্রাহিম, ইফতেখারুজ্জামানও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন রাশেদা কে চৌধুরী ও মোস্তাফিজুর রহমান।