সিপিডির সংলাপে দেশের উন্নয়ন নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশের উন্নয়ন কি সঠিক পথেই আছে এ নিয়ে সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিতর্ক হয়েছে। এই বিতর্কে আরও অংশ নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাঈদুজ্জামান।রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত আগামী অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা সংলাপে তাঁরা এ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, প্রবাসী-আয়, রাজস্বÑএসব সূচকের ইতিবাচক প্রবণতার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ছয় বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিই কর্মসংস্থানের চিত্রটি তুলে ধরে।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের চেয়ে জিডিপি-বিনিয়োগ অনুপাত বাংলাদেশের বেশি। ওই সব দেশ যদি নিম্ন বিনিয়োগ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন বা উন্নতি করতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেন পারবে না? তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে এ সময়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি এম সাঈদুজ্জামান বলেন, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ ক্যাটাগরি থেকে ৩০ বছরের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে একমাত্র দক্ষিণ কোরিয়া। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে ওই দেশটি তখন শিল্প খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছিল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও যথেষ্ট বিনিয়োগ হয়েছে। তাঁর মতে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপরও তিনি জোর দেন।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুস্তফা কামাল সাহেবের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ২০৪১ সালের আগে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। তিনি রসিকতা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মতো গাড়ির নম্বর প্লেটে ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশন লেখার ব্যবস্থা করা যায় কি না।’ তিনি বলেন, ইদানীং অনেকে বলার চেষ্টা করেন, আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। আমরা কি গণতন্ত্র চাই না? এ যুগে এসে কি ‘উন্নয়ন আগে, পরে গণতন্ত্র’Ñএ সিদ্ধান্ত নিতে হবে?

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তিনি বলেন, ‘তিন বিলিয়ন ডলারের পদ্মা সেতু নয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবেÑএটা আমি নিশ্চিত। যখন তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নয় বিলিয়ন ডলারে হয়Ñতাহলে কীভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে? অথচ গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় অনেক টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০১৩ সালের ৯৬৬ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। তাঁর মতে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। যতক্ষণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হবে, ততক্ষণ বেসরকারি বিনিয়োগ হবে না।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। বক্তব্য দেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা, সাবেক সাংসদ ফজলুল আজিম, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রমুখ।

মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনই আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের মূল বিষয় বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটের মূল বিষয় হলো প্রবৃদ্ধি অর্জন। বাজেটে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষে আমাদের জিডিপির প্রবৃ্দ্িধ ৭ দশমিক ২৫ হবে।বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বড় হলেও তা অর্জন করা সম্ভব উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল বলেন, গত ৫ বছরে রাজস্ব আদায়ে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। তাই এবারের বাজেটেও রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।তিনি আরো বলেন, অনেকে বলছেন- এত বড় বাজেটের এই বিশাল রাজস্ব আদায় কীভাবে সম্ভব। আমি তাদের বলতে চাই আমাদের ট্যাক্স জেনারেশন এই রাজস্ব দেবে।

মন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচককে দেশ অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কোনো প্রতিবেশীর সাথে মিলানো যাবে না। সামষ্টিক অর্থনীতির মূল এলাকাগুলো, জিডিপি ও রপ্তানিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি অসাধারণ। সেই সাথে দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে।আমরা ঠিক জায়গায় আছি। প্রত্যাশিত স্বপ্ন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।