ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে অস্ত্রের এত বড় মজুদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতার সুগভীর ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার খালে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীদের নয়Ñবড় ধরনের নাশকতার জন্য এগুলো মজুদ করা হয়েছিল।ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, জ্বালাও-পোড়াও করে, তারাই এ অস্ত্র রেখেছিলÑএগুলো উদ্ধার না হলে দেশে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো।সংবাদ সম্মেলন যারা আন্দোলনের নামে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তারাই এ অস্ত্র মজুদের সঙ্গে জড়িতÑএ কথা উল্লেখ করে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এর প্রমাণ খুঁজে বের করবে।অস্ত্রের এ চালান কোনো ছোট সন্ত্রাসী নয় উল্লেখ করে এটি একটি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বড় সন্ত্রাসী চক্রের কাজ বলেও দাবি করেন তিনি।

উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে উদ্ধার অস্ত্রগুলো নতুন ও অব্যবহৃত জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, নারী-শিশু হত্যায়’ জড়িত চক্রটিই ওই অস্ত্র মজুদ করেছিল বলে তাদের ধারণা।ওই অস্ত্রের প্রকৃত মজুদদারদের’ খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এটি কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীর কাজ নয়। এগুলো মজুদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত।আমাদের ধারণা, যারা ২০১৫ সালে নারী ও শিশু পুড়িয়ে মেরেছে, আন্তর্জাতিক পরিম-লে যারা দেশকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে চায়, সেই চক্রটি এই অস্ত্রগুলো মজুদ করেছিল।

দশম জাতীয় সংসদের বর্ষপূর্তি ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের জন্য সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে আসছে সরকার। যেসব ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে। শনিবার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট ও ১০৪টি গুলি তৈরির ছাচ উদ্ধার করা হয়। পরদিন এক কার্টন বন্দুকের ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়।পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পিস্তলগুলোর মধ্যে ৯৫টিই বিদেশি; বেশিরভাগই সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোরের। যেসব ম্যাগাজিন শনিবার পাওয়া গেছে তার মধ্যে ২৬৩টি এসএমজির। আর গুলির মধ্যে ২২০টি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোর পিস্তলের এবং ৮৪০টি নাইন এমএম পিস্তলের।পুলিশের উপ কমিশনার নুরুল আলম শনিবার জানিয়েছিলেন, অস্ত্রগুলো নতুন ও ব্যবহার উপযোগী।এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, অস্ত্রগুলো একেবারই আনইউজড এবং নতুন। এই অস্ত্রগুলো কোথায় তৈরি হয়েছে- তা লেখা নেই। কোনো লট নম্বর নেই। ঢাকার বাইরে থেকে এগুলো আসতে পারে।

এ ঘটনায় কারা জড়িত- তা জানতে তদন্তে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,এই অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তদন্ত করবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় রাজধানীর তুরাগ থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশের যতটুকু মেধা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা রয়েছে পুলিশ খুঁজে বের করবে কারা, কেন- এই অস্ত্রগুলো মজুদ করেছিল।

জঙ্গি দমনে সাত দিনের সাঁড়াশি অভিযান শেষ হওয়ার পরদিন একটি গাড়ি দেখে এক কনস্টেবলের ‘সন্দেহ হওয়ায়’ অনেকটা আকস্মিকভাবে ওই অস্ত্র ও গুলির সন্ধান পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।গত দুই বছরের একের পর এক হত্যাকা- এবং জঙ্গি কর্মকান্ডের জন্যও বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে আসছে সরকার।