বেগম মতিয়া চৌধুরী

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, মুসলিম বিশ্ব কর্তৃক ত্যাজ্য, আরব ও মুসলিম বিশ্বের শত্র“ ইসরাইলের সাথে হাত মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাতের অপতৎপরতা চালাচ্ছে।তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ও সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি-জামায়াত দেশে পরিকল্পিত গুপ্ত হত্যায় নেমেছে। বুধবার সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুনরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর পর্বের পর মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়।

গত ২ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ১২তম দিনে বুধবার কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সরকারি দলের মাহবুবুল আলম হানিফ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আলহাজ মো. দবিরুল ইসলাম, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, এইচ এন আশিকুর রহমান, খন্দকার আজিজুল হক আরজু, মো. মনিরুল ইসলাম, পংকজ নাথ, মীর শওকত আলী বাদসা, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, সাবিনা আখতার তুহিন, কাজী নাবিল আহমেদ ও জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি অংশ নেন।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, শিশুর অপুষ্টির আধিক্য হ্রাস, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার কমানো, টিকাদান কর্মসূচির অসামান্য সাফল্য, রিজার্ভ বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, অতিদরিদ্র হ্রাস, স্বাক্ষরতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক সুরক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। এদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের কারণেই সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে সম্মান করছে।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিগত সাত বছরে সরকারের বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯০ শতাংশ। এই সময়ে এডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৩ শতাংশ।

ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়া সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনার জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ঋণ করে সত্য, তবে ঋণ করে ঘি খায় না। ঋণের অর্থ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করছে। ঋণের পরিমান কমাতে হলে রাজস্বের আওতা বাড়াতে হবে। তবে রাজস্বের আওতা বাড়ানো হলে, এক্ষেত্রে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই প্রথমে আপত্তি তোলেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিয়েছে। এবারও তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, কৃষিতে ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা বোর্ডে ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা এবং অটিস্টিক শিশুদের জন্য একাডেমি স্থাপনে বরাদ্দের প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সঞ্চয়পত্রের ওপর আরোপিত কর কমানোর প্রস্তাব করেন।

সরকারি দলের সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সরকার ৭ বছরে যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছে তা ইতিহাসে মাইল ফলক হিসেবে থাকবে। বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। পরবর্তীতে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৬ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা অসংখ নিরীহ মানুষকে বোমা মেরে হত্যা করেছে। জিয়া ও খালেদা খুনি দম্পতি হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছে।

মাহবুব-উল আলম হানিফ বিদেশী কনসালটেন্টদের কনসালটেন্সির ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব করে বলেন, বিদেশী পরামর্শকরা কনসালটেন্সির নামে ৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে নিয়ে যায়।

তিনি মেডিটেশনের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের অন্য সদস্যরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামী তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যায় ব্যর্থ হয়ে সে এখন লন্ডনে থেকে বঙ্গবন্ধুর নাতনী ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।সরকারি দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী উল্লেখ করে বলেন, সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার লক্ষ্যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট যুগোপযোগী। বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের উন্নয়ন আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।এবারের বাজেটকে উন্নয়নমুখী উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট একটি স্বপ্ন পূরণের বাজেট। এই বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ প্রতিটি খাতের বাস্তবসম্মত দিক-নির্দেশনা রয়েছে।তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রজ্ঞা ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।ক্ষমতার লোভে বিএনপি নেত্রী ইসরাইল ও ইহুদীদের সাথে হাত মিলিয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের টাকা নিয়ে দেশে গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা উচিত।