23-06-16-PM_Parliament-3

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আজ সংসদে আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু উত্থাপিত আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করার পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করছি, এ ব্যাপারে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। কারণ কিছু ষড়যন্ত্র তো থাকবেই। সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশের গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত করেছে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমরা যেন সেইভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, দেশবাসীর সেবা করে যেতে পারি। এজন্য দেশবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া চান তিনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত আমরা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকসহ দলের পূর্বসূরী নেতা-কর্মী যাদের শ্রম, মেধা ও ত্যাগের বিনিময়ে দলটি গণমানুষের বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং সর্বশেষ মহান মুক্তিযুদ্ধ, যার সবই পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির যা কিছু মহান অর্জন তার সবগুলোই হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।

শেখ হাসিনা বলেন, সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা গড়ে তুলেন। মাত্র ৯ মাসে জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দেন। তিনি যখন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে ব্যস্ত তখনই ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। তিনি বলেন, ’৭৫-পরবর্তী সময়ে নানা চক্রান্ত এবং নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ অপচেষ্টা কখনই সফল হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময় যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিলো তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি। তারা কখনোই দেশের স্বাধীনতা চান না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। তখন দেশের মানুষ সুখের মুখ দেখতে থাকে। কিন্তু দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কাছে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। আমাদের অপরাধ ছিল দেশের সম্পদ গ্যাস বিদেশী শক্তির হাতে তুলে না দেয়া, অথচ ওই সময় খালেদা জিয়া গ্যাস দেয়ার জন্য মুচলেকা দিয়েছিল। ওই সময় বেশি ভোট পেয়েও আসন কম পাওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালায়। ওই সময়ে দলের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করা হয়। তাদের অত্যাচার, নির্যাতন একাত্তরের গণহত্যাকেও হার মানায়।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আবারো জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়। এরপর সরকার গত সাড়ে ৭ বছরে দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, গ্রামীণ উন্নয়ন, পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশলসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ শতাংশ। জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করার পর দেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত করেছিলেন। এরপর আর কোন সরকারের সময় আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু গভীর সমুদ্র সীমা ও স্থলসীমানা আইন করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতো। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত কি হবে, পতাকার রং কি হবে তা ঠিক করেছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের নামকরণও বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক প্রস্তুতি তিনি অনেক আগেই নিয়ে রেখেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব সময় দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সুসংগঠিত করেছে। এ জন্য তিনি নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠন করাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন, আওয়ামী লীগও এই নীতিতে বিশ্বাস করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের এখন মাথাপিছু আয় বেড়েছে দারিদ্র্যের হার কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, একে একে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সার্বভৌম জাতি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্বের বুকে বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চাই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার দেশকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।