ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ বাস-লঞ্চ-ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়

ঈদের ছুটি কাটিয়ে ফিরতি পথে বাসযাত্রা নির্বিঘœ হলেও খানিকটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ট্রেনের যাত্রীদের ।তবে লঞ্চে এখনও যাত্রীদের তেমন চাপ পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।শনিবার প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই দেখা গেছে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ; সেই সঙ্গে বিলম্ব যাত্রার ভোগান্তির কথাও বলেছেন কেউ কেউ। ঈদের সরকারি ছুটির শনিবার শেষ দিন। এরই মধ্যে ঢাকায় ফেরার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে রাজধানীতে এখনো কর্মব্যস্ততা শুরু হয়নি। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা যেমন কম, তেমনি কম মানুষের চলাফেরাও।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন নাহিদা আরেফিন। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় শনিবার ফিরে এসেছেন ঢাকায়। তিনি বলেন, ঈদের এক দিন পর গফরগাঁও থেকে ট্রেনের টিকিট পেতে বেশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। টিকিট না পেয়ে পরে রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় এসেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে কিছুটা যানজটে পড়লেও ঢাকার ভেতরে কোনো ভোগান্তি হয়নি। ‘উত্তরার পর থেকে রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল’, বলেন নাহিদা।সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন ছিল হাতে গোনা। রিকশাও খুব একটা চোখে পড়েনি। বেশির ভাগ দোকানপাটই ছিল বন্ধ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সিনেমা হলগুলোতে লাইন ধরে টিকিট কাটতে দেখা গেছে অনেককে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আইনুন আসাদ। ঈদে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রংপুর গিয়েছিলেন তিনি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা স্বামীর অফিস রোববার থেকে খুলবে। এ ছাড়া দুই সন্তানের স্কুলও কাল থেকেই খুলছে। তাই ঈদের এক দিন পরই ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাল থেকেই আবার সবকিছু আগের মতোই চলবে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল তো আর বাদ দেওয়া যাবে না।এদিকে রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে অনেকে। কমলাপুর রেলস্টেশনেও ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে ঈদের পর রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া কিছুটা বেশি দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ। পরিবহনের সংখ্যাও কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আজিমপুরের বটতলায় যেতে চেয়েছিলেন মো. আমিনুল হক। কিন্তু মিটারে যেতে চাননি কোনো চালক। শেষে কিছু টাকা বেশি দিয়েই অটোরিকশা ভাড়া নেন আমিনুল। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর এই সময়ে ভাড়া একটু বেশিই দিতে হয়। এবারও আগের অবস্থাই আছে।তবে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় আগামীকাল ও পরশু দিন আরও বাড়বে বলে মনে করেন আমিনুল। তিনি বলেন, এ কারণেই ঈদের এক দিন পরই ঢাকায় চলে এসেছেন। এ সময় ঢাকার ভেতরে যানজট কম থাকে বলেই তাঁর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-রাজশাহী রুটের সিল্কসিটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে। সেই ট্রেন এসে পৌঁছুয় বেলা আড়াইটার কিছু পরে।ট্রেনটির যাত্রী গোলাম কিবরিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রেনের টিকেট পেতে খুব ঝামেলা হয়েছে।অপর যাত্রী শহীদুল ইসলাম বলেন, ট্রেনে ব্যাপক ভিড় ছিল। অনেক কষ্টে কোনোমতে ট্রেনে উঠেছি। অনেক যাত্রী ট্রেনে উঠতেই পারেননি।ঢাকার একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন কালনী এক্সপ্রেসে করে সিলেট থেকে ঢাকা ফিরেছেন।তিনি বলেন, “ট্রেন খুব একটা লেট করেনি। তবে জার্নিটা বেশ কষ্টকর ছিল। প্রচ- ভিড়। তারপর ট্রেনের সিট জুড়ে পোকার উপদ্রপ। ট্রেনের বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “কয়েকটি ট্রেন ৫ থেকে ১০ মিনিট লেট করে এসেছে। ঈদে যাত্রীদের চাপের কারণে ট্রেনগুলোকে প্রতিটি স্টেশনেই নির্ধারিত সময়ের তুলনায় একটু বেশি সময় দাঁড়াতে হয়, এ কারণেই ট্রেনগুলোর আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।শনিবার মোট ৬৫টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে আসার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ঘুরে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো ছিল যাত্রীতে পূর্ণ।ঢাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন ঈদের ছুটি শেষে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছেন।

তিনি বলেন, টিকেট পেতে কোনো ঝামেলা হয়নি। ভালোভাবেই এসেছি। রাস্তায় কোনো যানজট ছিল না, দ্রুত আসতে পেরেছি।মহাখালী বাস টার্মিনালেও একই অবস্থা দেখা গেছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হুমায়ুন কবির কুড়িগ্রামের রৌমারিতে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফিরেছেন নির্ঝঞ্ঝাটভাবে।সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভপতি মো. আবুল কালাম বলেন, শুক্রবার বিকাল থেকেই সায়েদাবাদ টার্মিনালে যে বাসগুলো এসেছে সেগুলো যাত্রী পরিপূর্ণ ছিল। আজ সারা দিনও ভিড় ছিল তবে তা উপচে পড়া নয়। এ সপ্তাহের পুরোটা জুড়েই লোকজন ঢাকায় ফিরবে।

এদিকে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে নৌপথে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন; তবে সদরঘাটে সে চাপ তুলনামূলক অনেক কম।শুক্রবার বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষ হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান খুলবে রোববার।ছুটির হিসেব-নিকেশ যাই হোক না কেন সদরঘাট দিয়ে দেশের ৪১ রুটের মানুষ শনিবার থেকেই ঢাকায় আসতে শুরু করেছে।এদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত সদরঘাটে ভিড়েছে ৬৫টি লঞ্চ; ছেড়ে যাওয়া লঞ্চের সংখ্যা ২২টি।বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বলেন, শনিবার রাত থেকে যাত্রীর চাপ বাড়ার সম্ভবনা বেশি। তাই সদরঘাটে যাত্রী নামিয়ে দিয়েই অনেক লঞ্চ প্রায় খালি লঞ্চ নিয়ে চলে যাচ্ছে ওপ্রান্ত থেকে যাত্রী আনতে।

যাত্রীর চাপ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেভাবে এখনও মানুষ আসতে শুরু করেনি; শনিবার রাত থেকে চাপ বাড়তে পারে।চাঁদপুর থেকে সদরঘাটে ফিরেছেন মো. হাসান নামে এক যাত্রী।বেসরকারি চাকরিজীবী হাসানের কাছে এই আগেভাগে ফেরার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ভাই, আমিতো সরকারি চাকরি করি না। বাড়িতে গেছি ঈদের একদিন আগে, আজ চলে আসলাম, কাল (রোববার) থেকে অফিস।বিআইডব্লিটিসির স্পেশাল সার্ভিস থাকবে ১০ জুলাই পর্যন্ত।বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক সৈয়দ বরকত উল্লাহ বলেন, প্রতিদিন হুলারহাট ও মোড়লগঞ্জ থেকে একটি করে স্টিমার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ফিরে আসবে।