মুহিত

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বিভিন্ন ধরনের আইন করেও সরকার দুর্নীতি দমনে খুব একটা এগোতে পারেনি। তিনি মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে অনলাইনে অর্থ লেনদেন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া। সরকারের সব ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা চালু করা হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। তিনি সরকারের সব বিভাগকে যার যার জায়গা থেকে যতটা সম্ভব কাজের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি চালু করার আহ্বান জানান।রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বৈষম্য ও দারিদ্র্য নিরসনে বাজেট ও অন্যান্য নীতি-কাঠামোর ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ এ সংলাপের আয়োজন করে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি সিলেটের একটি কলেজের সভাপতি ছিলেন। ওই কলেজে আগে যেখানে ভর্তি কার্যক্রম থেকে আয় হতো আট লাখ টাকা, সেখানে যখন অনলাইন পদ্ধতি ভর্তি চালু করা হলো, সেই আয় বেড়ে হলো ৮৩ লাখ টাকা। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অনলাইনে লেনদেন হলে চুরি ঠেকানো সম্ভব, চোর ধরা যায় এবং অর্থ যার কাছে যাওয়ার কথা তার কাছেই যায়। ফলে সরকার পরিচালনায় বাজেটের অপচয় হয় না।

আয়করদাতার সংখ্যা এই সরকারের চলতি মেয়াদ শেষ হওয়া আগেই ২০ লাখে উন্নীত করা লক্ষ্য রয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। এখন এ সংখ্যা ১২ লাখ।এমন পর্যায়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অর্থমন্ত্রীকে একটি প্রস্তাব দেন। বলেন, এক কোটি টাকা কর দিতে পারেন, এমন ৩০ হাজার করদাতা চিহ্নিত করা। এই প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি চমৎকার প্রস্তাব। কীভাবে এমন করদাতাদের চিহ্নিত করা যায়, সে পদক্ষেপ তিনি নেবেন।শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাইমারি ও উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ভালো। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা ভালো নয় বলে তিনি মনে করেন। এ নিয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আইন-কানুন করেও দেশে দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না। দুর্নীতি কমাতে আগামী বছর থেকে সব ক্ষেত্রে ই-টেন্ডার চালু করা হবে।অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আয়ের তুলনায় দেশের মানুষকে যে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়, তা অচিন্তনীয়। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে মানুষকে সামাজিক সুরক্ষায় আনা হয়েছে। বর্তমানে ৬০ শতাংশ মানুষকে সরকার পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়।

বিধবা-বৃদ্ধসহ কোনো লোকই মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ সুবিধা নিচ্ছেন না বলেও মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশের দারিদ্র্যের যে কাঠামো রয়েছে, সেই কাঠামোই দারিদ্র্য নিরসনের প্রথম সমস্যা। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধনী থেকে দরিদ্র হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা মানুষকেও দারিদ্র্যের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।তথ্যমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করতে হলে খাদ্য অধিকার আইন ও ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকার আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস (এমডিজি) অর্জন করবো। তা অনেক অংশে অর্জন করতে পেরেছি’।সাবেক মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্র“পের (এপিপিজি) চেয়ারপারসন ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ফখরুল ইমামসহ সরকার দলীয় এমপি ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন এপিপিজিএসের সেক্রেটারি জেনারেল শিশির শীল। দেশের বৈষম্য ও দারিদ্র্য নিরসনে বাজেটে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যকার বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন ও অক্সফ্যামের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এম বি আখতার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।