অপারেশন স্টর্ম-২৬

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেন গোপন তথ্য না পান, সে উদ্দেশ্যে অভিযানের আগেই নিজেদের সব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ভেঙ্ ফেলে জঙ্গিরা। অভিযানের পর পুলিশ কর্মকর্তারা জঙ্গি আস্তানায় তল্লাশি করে কয়েকটি ল্যাপটপ ও মোবাইলের ভগ্নাংশ উদ্ধার করেছেন। জঙ্গি প্রতিরোধ সেলের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিরা এমনিতেই প্রটেক্টেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। জঙ্গিদের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসগুলোতে এমন কিছু হয়তো ছিলো, যা ফাঁস হয়ে গেলে জঙ্গিদের পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানা যেত। এ কারণে তারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো ভেঙে ফেলেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙা ডিভাইসগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। প্রযুক্তির সহযোগিতায় এগুলো থেকে কোনও তথ্য উদ্ঘাটন করা যায় কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সোমবার দিবাগত রাতে কল্যাণপুরের বিভিন্ন মেসে অভিযান চালাতে গিয়ে ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। পরে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াত ঘটনাস্থলে যায়। উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনায় সকাল ৫টা ৫১ মিনিটে ওই আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এক ঘণ্টার অভিযানে আস্তানায় থাকা ৯ জঙ্গি নিহত হয়।

কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গিদের বিভিন্ন গ্রুপে শিক্ষিত ছেলেরা যোগ দেওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। তাদের অনেকেই তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়েও দক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা পারস্পারিক যোগাযোগের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব তথ্য জানতে পারেন। এমনকী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরও জঙ্গিরা থ্রিমা নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভেতরের ছবি পাঠায় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানায়।

সূত্র জানায়, জঙ্গিরা পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য এমন কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যার ফলে নজরদারি করা হলেও তা থেকে কোনও তথ্য উদ্ধার করা যায় না। এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় তথ্য পাঠানো হলে তা সার্ভারে এনক্রিপ্ট হয়ে যায়। এ কারণে তাদের তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা খুব কম বলে তারা নিশ্চিতে যোগাযোগ করতে পারে। গত বছরের ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডের পর হাতেনাতে আটকের পর দুই জঙ্গি আরিফুল ও জিকরুল্লাহ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রটেক্টেড টেক্সড ব্যবহার করে বলে স্বীকার করে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কল্যাণপুরের আস্তানায় বসে জঙ্গিরা বড় কোনও হামলার পরিকল্পনা করছিল। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও অন্যান্য তথ্য ছিল তাদের ল্যাপটপ ও মোবাইলে। এমনকী তাদের মাস্টারমাইন্ডদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ বা অন্য আস্তানায় থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রও ছিল তাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। একারণেই তারা এসব নষ্ট করে রাখে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যখন তারা বুঝতে পারে তারা এই আস্তানা থেকে আর পালাতে পারবে না, তখনই তারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো ভেঙে ফেলে। এরপর তারা কথিত ইসলামিক স্টেটের কালো পোশাক পরে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কল্যাণপুরের আস্তানায় জঙ্গিরা চলতি মাসেই উঠেছিল। তারা ধীরে-ধীরে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ মজুদ করছিল। জঙ্গিরা ধারণাই করতে পারেনি এত তাড়াতাড়ি তারা ধরা পড়ে যাবে। মিরপুরের আস্তানা থেকে পালানোর সময় আটক হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতেই মিরপুরের আরও দুটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সিটি কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসনে জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব যাচাই-বাছাই চলছে। গোয়েন্দা নজরদারির পর জঙ্গি আস্তানার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সেগুলোতে অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।