কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি অর্ক যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী!কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন সেজাদ রউফ অর্ক অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিল। নিউ ভিক্টর লিমিটেড (এনভিএল) নামে অস্ত্র সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিল সে। ১৯৭৭ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী অর্ক আমেরিকার নাগরিক। র‌্যাব সম্প্রতি নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল সেখানে তার নাম ছিল। সেই তালিকাতেই তার আমেরিকান পাসপোর্টের কথা উল্লেখ ছিল।

অর্কের বাবার প্রতিষ্ঠান এনভিএল ১৯৭৭ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। উইকিলিকস কর্তৃক ফাঁস করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন নথি (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯) অনুসারে, ১৯৭৭ সালে ৬ এপ্রিল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রউফ এনভিএল গড়ে তোলেন। তার ছেলে তৌহিদ রউফ ১৯৮৮ সাল থেকে এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর অর্ক এখানে পরিচালক পদে ছিলেন।

orka-business

এদের বিষয় তথ্যে উইকিলিকস বলছে, বাংলাদেশ পুলিশ ও ডিরেক্টর জেনারেল অব ডিফেন্স পারচেজ (ডিজিডিপি) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এর প্রধান ক্রেতা। তারা অস্ত্র, মিলিটারি ট্রাক, রাড়ার যন্ত্রাদিসহ বেশকিছু জিনিস আমদানি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছে দেয়। যদিও আমদানি রফতানি কর্তৃপক্ষের দাবি, ডিফেন্স আর্টিকেলের ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ অনুমোদন নেই। কেবল তারা কেন বেসরকারি কোনও সংস্থারই সেই অনুমোদন নেই।

সেজাদ রউফ মরক্কোর জীবন-বৃত্তান্ত থেকে তার কোম্পানির কাজ সম্পর্কে জানা যায়, ‘আমরা (এনভিএল) এই ব্যবসাক্ষেত্রে সবচেয়ে পুরোনো কোম্পানি। আমরা বিদেশ থেকে (চীন, ইংল্যান্ড, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কোরিয়া, সাউথ আফ্রিকা) পুলিশ, আর্মি, র‌্যাব, নৌবাহিনীর কাছে টেণ্ডার অনুযায়ী সেনা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করি।’

orko-business

অর্ক আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্বিবদ্যালয়ে বিবিএ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছে। লিঙ্কডইনে প্রকাশিত তার জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, পারদর্শিতার ঘরে সে লিখেছে নেতৃত্ব, স্যোশাল নেটওয়ার্কিং, কৌশল পরিকল্পনা, টিম ম্যানেজমেন্ট, সময় ব্যবস্থাপনাসহ আরও নানা বিষয়। এনভিএল প্রতিষ্ঠানে তার দায়িত্ব লিখতে গিয়ে সে লিখেছে, বর্তমান ও ভবিষ্যতের লেনদেনগুলো কিভাবে প্রতিষ্ঠান করছে সেগুলো তদারকি করা।

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত নিবরাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিল সে বলে ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। অর্ক দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিল। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ১০ নম্বর সড়কের ৩০৪ নম্বরটি বাসা তাদের। অর্ক নিখোঁজ হওয়ার পর ভাটারা থানায় একটি জিডি করে তার পরিবার। জিডি নম্বর-৩৯২। অর্কের বাবার এনভিএল কোম্পানি নিয়ে তেমন কোন খবর কখনও প্রকাশিত হয়নি। দেশীয় গণমাধ্যমে সর্বশেষ তারা খবরে এসেছিল ২০১৪ সালে যখন শটগানের ‘রাবার কার্টিজ’ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি বাংলাদেশে রাবার কার্টিজ রফতানির জন্য ‘এক্সপোর্ট লাইসেন্স’ দিচ্ছে না বলে পুলিশ সদর দফতরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিল রাবার কার্টিজ সরবরাহের স্থানীয় এজেন্ট নিউ ভিক্টর লিমিটেড।

উইকিলিকসে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আমদানি রফতানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এই কোম্পানি প্রতিরক্ষা যন্ত্রাদি পরিবহনে যথাযথ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নয়। এমনকি কোনও বেসরকারি সংস্থারই এই অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে কথা বলতে তার বাবা তৌহিদ রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দু’দফা ফোন ধরলেও সাংবাদিক শুনে আর কথা বলতে চাননি। তবে তিনি ২৭ জুলাই ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, তার ছেলের জন্ম বাংলাদেশে হলেও বেশিরভাগ সময় ইলিনয় ও ক্যালিফোর্নিয়ায় কাটিয়েছে। তিনি বলেন, নিঁখোজ হওয়ার আগে সে বিপথগামী হচ্ছে এমন কোন চিহ্ন তারা বুঝতে পারেননি।