Republican-presidential-candidate-donald-trumpমার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন গোপন ইমেইল ফাঁস করতে রাশিয়াকে এগিয়ে আসতে বলার পর বিপাকে পড়েছেন রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে সরকারি কাজে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর হিলারি যেসব মেইল তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেননি; রাশিয়াকে সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির, মার্কিন জনগণ এবং রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।

ক’দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ব্যক্তিগত সার্ভার দিয়ে হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল আদান প্রদানের ঘটনাকে শেষপর্যন্ত চরম অসাবধানতা বলেই রায় দেয় মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই। তাই হিলারির বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এই সিদ্ধান্তে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আর বুধবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের উদ্বৃতি দিয়ে হিলারির ইমেইল ফাঁসে রাশিয়াকে আহ্বান জানানোর খবর মেলে। ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া, যদি তুমি শুনে থাক… আশা করি গায়েব হয়ে যাওয়া (হিলারির) ৩০ হাজার ইমেইল খুঁজে বের করার যোগ্যতা তোমার আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির কর্মকর্তাদের ই-মেইল ফাঁসে যখন রাশিয়াকে দায়ী করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এই মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। ইউকিলিকসের ফাঁস করা ওইসব ইমেইলের মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বীকে সুবিধা দিতে চেয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ডেমোক্র্যা্টদের একাংশ। হিলারির প্রচারণা শিবিরের দাবি, নির্বাচনে ট্রাম্পকে সহায়তা করতে রাশিয়ানরাই রয়েছে জাতীয় কমিটির ই-মেইল ফাঁসের পেছনে; যাতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীর বাছাই পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্সের তুলনায় হিলারির প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে দেখানোর চেষ্টা দেখা যায়। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। টুইটার-ফেসবুকে অনেকেই ট্রাম্পকে দুষছেন। বলছেন, নিজ দেশে তিনি বিদেশি দেশের হস্তক্ষেপের বন্দোবস্ত করতে চাইছেন। একে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড বলেও উল্লেখ করছেন কেউ কেউ।

এদিকে হিলারি ক্লিন্টনের পলিসি অ্যাডভাইজার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো কোনও একজন প্রেসিডেন্ট পদতপ্রার্থী বিদেশি দেশকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি লেলিয়ে দিলেন। ট্রাম্পের মন্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে বিচার করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

সিআইএর সাবেক একজন পরিচালক লিয়ন পেনেত্তা বলেছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য প্রার্থী হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সিএনএন-এর রাজনৈতিক ভাষ্যকার ক্রিস্টিন কুইন বলেছেন, ‘এটা স্পষ্টতই রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল’। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে হিলারি সরকারি কাজের জন্য ব্যক্তিগত ই-মেইল একাউন্ট ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারের আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে ২০১৫ সালে অভিযোগ ওঠার পর সেগুলো জনসমুম্খে প্রকাশের উদ্যোগ নেন হিলারি। তবে এর মধ্যে কিছু ইমেইল প্রকাশ না করে সেগুলো ব্যক্তিগত বলে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে ট্রাম্পের এই প্রতিদ্বন্দ্বী।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা চাওয়ার পর হিলারির ইমেইল ইস্যু জোরালো হয়ে ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ,অনিরাপদ সিস্টেম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন হিলারি। তবে ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও হিলারির দাবি, তিনি ভুল কিছু করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই ঘটনাটির তদন্ত করছিল। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) এফবিআইয়ের পরিচালক জেমস কমে বলেন, হিলারি ক্লিনটন তার ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভারের একশর বেশি ই-মেইলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল। এ জন্য হিলারিকে ‘চরম অসাবধান’ বললেও কোনো অভিযোগ করা হবে না বলে জানান জেমস কমে।

এদিকে ইউকিলিকসের সার্ভারে ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় কমিটির প্রায় ২০ হাজার ইমেইল ফাঁসে রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের মুখ থেকে শোনার পর তাদের ঘোরতর সন্দেহ, এর পেছনে নিশ্চয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মদদ রয়েছে। আর ইমেইল ফাঁসে ট্রাম্প-পুতিন যোগসাজস বা তাদের মধ্যে আগে থেকে কোনো সম্পর্ক থাকার বিষয়ে ডেমোক্রেটদের সন্দেহও জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের প্রচার শিবির। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকেও ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্র: গার্ডিয়ান, ইন্ডিপেনডেন্ট